ঢাকা শুক্রবার
১৮ জানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

শেয়ারবাজারের জন্য ডিএসই’র ৫ প্রস্তাব


Reporter01
74

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৪
শেয়ারবাজারের জন্য ডিএসই’র ৫ প্রস্তাব Collected from online



নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৫টি প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রস্তাবগুলো হলো- স্টক এক্সচেঞ্জে সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে মূলধনী মুনাফার (ক্যাপিটাল গেইন) ওপর নতুন করে কর আরোপ না করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় কর কমানো, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার হ্রাস; উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা ও লভ্যাংশপ্রাপ্তির  প্রথম পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় এবং তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতি দেয়া।

 

মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। এ সময় ডিএসইর পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

স্টক এক্সচেঞ্জে সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে মূলধনী মুনাফার ওপর নতুন করে কর আরোপ না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর নতুন করে করারোপ না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ছাড়া, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে এসআরও নং- ১৯৬-আইন/আয়কর/২০১৫) তে বর্ণিত কর হার হ্রাসের জন্যও অনুরোধ জানাচ্ছি। বর্তমানে দেশের প্রায় ১ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শেয়ারবাজারের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিশ্বায়নের যুগেও শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের জন্য সরকারের রাজস্বনীতির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এমতাবস্থায়,  দেশে স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গঠনের জন্য উপরোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ সদয় বিবেচনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হার হ্রাস প্রসঙ্গে ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হারে ৭.৫ শতাংশ ব্যবধান রয়েছে। আমাদের প্রস্তাব হলো- তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত  কোম্পানিগুলোর মধ্যে কর্পোরেট করহারের পার্থক্য ১০ থেকে ১২.৫ শতাংশ করা। তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কর্পোরেট করহারের পার্থক্য ৭.৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ বা ১২.৫ শতাংশে এ উন্নীত করা। এজন্য তালিকাভুক্ত পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর হার হ্রাসের পাশাপাশি নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। 

 

ফলশ্রুতিতে, আরও বহুজাতিক এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল স্থানীয়  কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ ধরনের একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ সরকারি শেয়ার তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের লালিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের কর সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবদান প্রশংসনীয়। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও, আইনের যথাযথ আনুগত্য এবং প্রয়োগের কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রত্যক্ষ আয়কর বা রাজস্বেও ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যকর নির্দেশনা এবং স্টক এক্সচেঞ্জের নিবিড় পর্যবেক্ষণের অধীনে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার হ্রাস সত্ত্বেও কর্পোরেট আয়করের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

 

উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা এবং লভ্যাংশপ্রাপ্তির প্রথম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আয়কর আইনের ধারা ১১৭ মোতাবেক লভ্যাংশ হতে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে, যা ১৬৩ ধারার উপধারা ২(খ) মোতাবেক নূন্যতম কর হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু উক্ত উৎসে কর্তিত কর সঞ্চয়পত্রের সুদের ন্যায় চূড়ান্ত করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, যা শেয়ারবাজারবান্ধব নয় বলে প্রতীয়মান। তাই লভ্যাংশ আয়ের ওপর উৎস করকে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর্তনকৃত করের ন্যায় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া, করযোগ্য আয় গণনায় লভ্যাংশ আয়ের ওপর প্রথম ৫০ হাজার টাকা করছাড় আয়কর আইন, ২০২৩-এ বাতিল করা হয়েছে কিন্তু এটি আইটিও, ১৯৮৪ (আইটিও, ১৯৮৪)-এর ষষ্ঠ তফসিল, পার্ট-এ, প্যারা-১১ তে অনুমোদিত ছিল। বর্তমান  শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে, লভ্যাংশ আয়ের প্রথম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের বাইরে রাখা উচিত হবে। এটি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে যা শেষ পর্যন্ত শেয়ারবাজারের সার্বিক  লেনদেন বৃদ্ধি তথা কর রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং শেয়ারবাজারের  টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

 

এদিকে, করোনা মহামারি ও তৎপরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধেও বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। ফলে শেয়ারবাজার মারাত্মক তারল্য সংকটে ভুগছে। প্রস্তাবিত বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হলে, তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, লভ্যাংশের ওপর কর হল সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর জন্য এক ধরনের দ্বিগুণ এবং ক্ষেত্রভেদে তিনগুণ কর আরোপ। লভ্যাংশের ওপর উৎস কর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হলে, এটি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে; যা বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানায় অর্থ সংস্থানে ভূমিকা রাখবে। তাতে শেয়ারবাজারের সার্বিক  লেনদেন বৃদ্ধি, কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে কর রাজস্ব বৃদ্ধির সহায়ক হবে বলে জানান তিনি।

 

স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার হ্রাস করার প্রসঙ্গে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত সিকিউরিটিজ  লেনদেনের মূল্য পরিশোধকালে ০.০৫ শতাংশ (যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জের আয় ০.০২৫ শতাংশ অর্থাৎ এক্সচেঞ্জের আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ) হারে কর সংগ্রহ করে। এ করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। 

 

অতএব, আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ কর কর্তনের হার হ্রাস করা প্রয়োজন। বিদ্যমান উইথ হোল্ডিং ট্যাক্স ০.০৫ শতাংশের ফলে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলো তাদের স্বাভাবিক করদায়ের চেয়ে বেশি হারে আয়কর প্রদান করে। ডিএসই কর্তৃক সংগৃহীত এ অতিরিক্ত অর্থ সদস্যগণ কর্তৃক ফেরত হিসেবে দাবি করা যায় না। 

 

কারণ, তাদের আয় আয়কর আইন ২০২৩ এর সেকশন ১৬৩ এবং ১৬৪ এর আওতায় মিনিমাম ইনকাম ট্যাক্সের অন্তর্ভুক্ত, যা প্রত্যক্ষ করের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, করোনা মহামারির প্রভাব বিবেচনা করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ ধরনের করের হার বর্তমানের ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন (অর্থ আইন, ২০০৫ এ - এ হার ০.০১৫ শতাংশ ছিল)। 


আরও পড়ুন:

বিষয়: