ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

ইউনিয়ন ব্যাংকের ডিভিডেন্ডে হতাশ বিনিযোগকারীরা


Reporter01
101

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২৪
ইউনিয়ন ব্যাংকের ডিভিডেন্ডে হতাশ বিনিযোগকারীরা Collected from google



বিশেষ প্রতিবেদক

ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি এবারও হতাশ করছে। গেলবারের মতো ৫ শতাংশই ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এতে করে কোম্পানিটির ক্যাটাগরির উন্নতি ঘটছে না। বরং সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ কোম্পানিটির ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড উধাও। সত্যিই কি দেশের বৃহত্তর গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের অবস্থা শোচনীয়? নাকি নেপথ্যে ভিন্ন কিছু?  

ব্যাংটির দাখিল করা নথিপত্র বলছে, যে পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশি দেয়ার সামর্থ্য ছিল, আছে। এবার ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে পারতো পরিচালনা পর্ষদ। তাতেও ৬০ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৯ টাকা সঞ্চিতি হিসাবে থাকত। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন- কেন, কার স্বার্থে এ লুকোচুরি? বিষয়টি নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখার দাবি তুলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। তিনি বিনিযোগকারী। ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালকও। ইউনিয়ন ব্যাংকের ডিভিডেন্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাস্তবিক অর্থে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে আছে। তারা সেটি নথিপত্রে দেখায়নি। উল্টো কাঙ্ক্ষিত প্রফিট দেখিয়েছে। মূলত তারল্য সংকট থাকায় ব্যাংকটি সন্তোষজনক ডিভিডেন্ড অনুমোদন করেনি।

 

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। সূত্র- ডিএসই

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। সূত্র- ডিএসই

ইউনিয়ন ব্যাংকের ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ১.৫৮ টাকা। সে অনুযায়ী কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ১৬৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ১০৭ টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি ৫১ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার ২২৪ টাকা বিনিয়োগকারীদের দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে। যা ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির হাতে ১১১ কোটি ৯১ লাখ ৮২ হাজার ৮৮৩ টাকা অবশিষ্ট থাকবে। কোম্পানিটি চাইলে আরও ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে পারত। তাতেও ৬০ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৯ টাকা সঞ্চিতি হিসাবে থাকত।

এদিকে বিএসইসির বিধি মোতাবেক ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড অনুমোদন করলে কোম্পানিটির ক্যাটাগরির উন্নয়ন হতো। অর্থাৎ ইউনিয়ন ব্যাংকের উন্নতি ঘটতো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। এখন আছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো ডিভিডেন্ড দিতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ডিভিডেন্ড দেয়ার বিষয়টি সুপারিশ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্যারামিটার দেখে ডিভিডেন্ডের সুপারিশ করে থাকে। ইউনিয়ন ব্যাংকের অর্থনৈতিক প্যারামিটারগুলো দেখেই হয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়ার সুপারিশ করেছে- এমন ধারণা করছেন ইবিএল সিকিউরিটিজের এমডি মো. সাইদুর রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলেও প্রফিট থেকে ৬০ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৯ টাকা অবশিষ্ট থাকতো। এতে করে ব্যাংকটির ক্যাটাগরির উন্নয়ন হতো। অর্থাৎ ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নিত হতো। এতে করে হতাশা কাটিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে ব্যাংকটি নিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হতো। কিন্তু তার উল্টো করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত বছরে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১.৫৭ টাকা। বছরের ব্যবধানে ইপিএস মাত্র দশমিক ০১ টাকা বেড়েছে।

ইউনিয়ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের মোট শেয়ার সংখ্যা ১০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ৪৪৮টি; যেখানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ৫৬.৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ১২.৬৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৩০.৮২ শতাংশ। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০২১ সালে ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ১০ শতাংশ; যার মধ্যে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ছিল ৫ শতাংশ এবং স্টক ডিভিডেন্ড ছিল ৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শুধু ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আজ (২৮ এপ্রিল) ব্যাংকের সমাপনি শেয়ার দর ছিল ৭.৪০ টাকা।

এসব ব্যাপারে জানতে ইউনিয়ন ব্যাংকের কোম্পানি সচিব আলি হোসেন ভূঁইয়াকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি।


আরও পড়ুন:

বিষয়: