ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

সফল উদ্যোক্তা তুহিনের গল্প


নিউজ ডেস্ক
204

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২০
সফল উদ্যোক্তা তুহিনের গল্প



মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল খুব একটা ভালো হয়নি। তবুও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেবিদ্বার এসএ সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। কিন্তু লেখাপড়ার ফল নিয়ে খুব বেশি দূর এগোনো যাবে না, নিজের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয় সাইফুল ইসলাম তুহিনের। তাই লেখাপড়ার আনুষ্ঠানিক পাঠ চুকিয়ে মনোনিবেশ করেন ক্ষুদ্র কৃষি খামারে। সাইফুল ইসলাম তুহিন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে।

তবে এর আগেও অন্য একটা গল্প রয়েছে। বেশি টাকা আয়ের নেশায় ১৯৯৩ সালে কৃষিকাজ বন্ধ রেখে চলে যান কুয়েতে। সেখানে একমাস ১৭ দিন থেকে সেই আশায় গুড়েবালি হলে ফিরে আসেন দেশে। এসেই শুরু করেন পুরোদমে কৃষিকাজ। সেখানে পেলেন সফলতাও। প্রথমে শুরু করেন গাভী পালন। এরপর শুরু করেন মাছ চাষ, মুরগি পালন। বর্তমানে তুহিন প্রায় তিন একর জায়গায় গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি লেয়ার জাতীয় মুরগির একটি ফার্ম, দুটি মিশ্র জাতীয় গরুর খামার। এছাড়া ২০ থেকে ২৫টি পুকুরে চাষ করছেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ৮০ হাজার টাকায় শুরু করা ব্যবসায় তুহিন এখন প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালিক। ১০ থেকে ১৫ জন বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তুহিন এখন স্বপ্ন দেখেন বড় একজন উদ্যোক্তা হওয়ার। সফল উদ্যোক্তা তুহিন জানান, ব্যবসার শুরুটা ছিলো আমার স্বপ্নের মতো। শত বাঁধা আর প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি দমে যাইনি, নিরাশ হইনি। যেখানে আমি বেকারত্ব নিয়ে দিশেহারা ছিলাম, সেখানে আজ আমি ১০ থেকে ১৫ জন যুবকের বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমার এখানে ১০ থেকে ১৫ বছর যাবত পঞ্চঘরের চারজন যুবক কাজ করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরো কয়েকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। প্রতি মাসে আমি তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন দেই। তিনি আরো বলেন,  ১২০ শতক জায়গায় গাভীর জন্য জার্মান প্রজাতির ঘাস চাষ করছি। আমার খামারে বাহির থেকে গরু আনা হয় না। এ খামারেই গাভী থেকে বাছুরের জন্ম হয়। এই বাছুর লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করা হয়। খামারে ১৫টি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লিটার দুধ আসে। খামার থেকেই পাইকারি দরে দুধ বিক্রি করা হয়। এছাড়াও মুরগির ফার্ম থেকে প্রতি দিন সাড়ে তিন হাজারের বেশি ডিম আসে। ডিম ও দুধ থেকে প্রতি মাসে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হয়। এছাড়াও ২০ থেকে ২৫ টি ছোট-বড় পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছি। এখান থেকেও প্রতিমাসে ভালো টাকা আয় হয়। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়াসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা যায়। এদিকে ব্যবসায় সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথাও জানান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তুহিন। তিনি বলেন, একটা সময়ে এ ব্যবসায় অনেক বেশি লাভ করা যেত। এ ব্যবসার আয় দিয়ে সংসার চালিয়ে তিন ছেলেকে লেখা-পড়া করাসহ কুমিল্লা শহরে বাড়ি করেছি। বর্তমানে পশু-প্রাণির খাবার ও ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। কোন কোন মাসে লাভের বদলে লোকসানও গুনতে হচ্ছে। বাজারে ডিম ও দুধের দাম কম হওয়ায় লাভের পরিমাণও কম হচ্ছে। তিনি বলেন, বড় বড় উদ্যোক্তাদের কারণে আমাদের মতো মাঝারি বা ছোট উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বাজার দখলে নিয়েছেন। তারা বেশি উৎপন্ন করে কম দামে বেশি বেশি সেল করে পুষিয়ে নেন। কিন্তু আমাদের মতো ক্ষুদ্র বা মাঝারি উদ্যোক্তাদের চাহিদা কম। আমরা কম উৎপন্ন করছি, কিন্তু বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি না। গত ১০ বছর ধরে এ খামারেই কাজ করছেন পঞ্চগড়ের বেলাল ও হেলাল নামের দুই ভাই। তারা বছরে দুই একবার বাড়িতে গেলেও এ খামারই যেন তাদের আসল বাড়ি। এ খামারের পশুদের সঙ্গেই তাদের বেশি সখ্যতা। নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করে আসছেন খামারের গাভীদের। গাভীদের অসুখ-বিসুখে চিকিৎসক ডাকা, সময় মতো ওষুধ খাওয়ানো, ইঞ্জেকশান দেয়াসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন বেলাল ও হেলাল। এদিকে বেলাল ও হেলাল ছাড়াও  মুরগীর ফার্ম, গরুর খামার ও মাছের বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখাশোনা করেন আশরাফুল, হাবিব, বিল্লাল, সাদ্দাম, সাইদুল, বদু, জসিম, মুক্তা, রহিমা বেগমসহ আরো কয়েকজন। তারা সবাই ব্যস্ত থাকেন বিভিন্ন কাজে। কেউ পশুদের খাবার তৈরি করছেন, কেউ গরুর দুধ ও মুরগীর ফার্ম থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন। আবার কেউ মাছের প্রজেক্টে খাদ্য নিয়ে যাচ্ছেন। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, মালিকের অনুপস্থিতে আমরাই খামার দেখাশোনা করি। এ খামারই আমাদের বাড়ি-ঘর, এখানেই থাকা-খাওয়া। মাসের পাঁচ থেকে ১০ তারিখের মধ্যেই বেতন-ভাতা পাই। তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকতা উত্তম কুমার কবিরাজ জানান, উপজেলা কৃষি  বিভাগ সব সময়ই উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তুহিন মিয়া আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। তাকে দেখে অনেকের শিক্ষা নেয়া উচিত। চাকরির পেছনে না ঘুরে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে খামারির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের খামারেই শত শত বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।

আরও পড়ুন:

বিষয়: