ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৫ জুন ২০২৪

ইসলামিক দৃষ্টিতে শেয়ার লেনদেন কি জায়েজ


নিউজ ডেস্ক
65

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৮
ইসলামিক দৃষ্টিতে শেয়ার লেনদেন কি জায়েজ



ইসলামিক দৃষ্টিতে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন করা কি জায়েজ? অনেকে বলছেন- হ্যাঁ, আবার অনেকে বলছেন- না। অংশীদারী কারবারের শেয়ার লেনদেন নিয়ে শুরু হয়েছে মানসিক দ্বন্দ্ব। ইতোমধ্যে অনেকে স্টক বাংলাদেশ – ফোন করেও এমন প্রশ্ন ছুঁড়েছেন।

স্টক বাংলাদেশ -এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইমলামিক বিভিন্ন চিন্তাবিদের দ্বারস্থ হয়েছেন। উত্তরের সন্ধানে খুঁজতে হয়েছে নানা পুঁথির মাসয়ালা। শেয়ার লেনদেন করা কি জায়েজ? এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকের মতামত হলো- অংশীদারী কারবারের শেয়ার লেনদেন জাহেলি যুগেও ছিল, এখনো রয়েছে। তাদের ভাষায় তারা ব্যাখ্যা করেন; কোন অংশীদার তার অংশ অন্য শরীকদের অনুমতি ছাড়া বিক্রি করতে পারবেন তবে অনুমতি সাপেক্ষে। তবে বাইরের লোককের কাছেও বিক্রি করতে পারবেন কিন্তু লেনদেন বৈধ হওয়ার জন্য ঐ সকল শর্ত ও আহকাম রয়েছে যা মুশারাকা ও মুদারাবা পূরণ করা হয়েছে। ‘ইসলামী জীবন-পদ্ধতির মুলনীতি’ অনুযায়ী একটি নিবন্ধ নীচে তুলে তুলে ধরা হলো। যা পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর পেতে সহায়ক হবে।
  • যে কারবারে পুঁজি হালাল বা অধিকাংশ হালাল সেখানে অংশীদার হওয়া বৈধ নতুবা বৈধ নয়।
  • যে কারবার বৈধ পদ্ধতিতে করা হচ্ছে অবৈধ কোন দিক নেই, সেখানে অংশীদারী লেনদেন করা বৈধ। কেউ নিজের অংশ বিক্রি করতে চাইলে অন্য কেউ তা খরিদ করতে পারবেন। কিন্তু যে কারবার অবৈধ সে রকম কারবারের শেয়ার ক্রয় – বিক্রয় বৈধ নয় এবং তার মুনাফা হারাম।
  • যে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সূদি বা জুয়ার কারবারি বা তার অধীকাংশ কারবার সূদি, জুয়া বা শরিয়তের বিরোধী হয় তখন তার শেয়ার লেনদেন অবৈধ ।
  • শেয়ার পত্র কোন বাস্তব কোম্পানির রশিদ ও সার্টিফিকেট। উদাহরণ স্বরূপ- এক হাজার টাকার শেয়ার বিক্রির অর্থ কোম্পানির সেই সম্পদ থেকে সেই পরিমান অংশ বিক্রি করছে তাই যদি কোন বাস্তব কোম্পনি বিদ্যামান থাকে এবং সেখানে বিক্রির সকল মূলনীতি পাওয়া যায় তখন তার শেয়ার বিক্রয় বৈধ। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কারবার ও ব্যবসায় উদ্দেশ্য শেয়ার জারি করা, যাতে নিদিষ্ট অংক অর্জন হওয়ার পর; কাজ করবে এখনও সে ব্যবসার কাজ শুরু করেনি তখন কোম্পানিতে শরিক হওয়ার জন্য এ রকম শেয়ার লেনদেন বৈধ; কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পূর্বে যে শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে তা অতিরিক্ত বা কম মূল্যে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।
যেমন কিছু সংখ্যাক ব্যক্তি একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা করেছে। তারা কোম্পানির জন্য জমি, দালান মেশিনারি ও যাবতীয় সামগ্রীর মূল্যে কোম্পানির কর্মচারী বেতন ও অন্যান্য খরচাদী হিসাব করে দেখেছে- তিন কোটি টাকা প্রয়োজন, কাজ করার পর আনুমানিক লাভ হবে ১০ লাখ। উক্ত তাফসীলের ভিত্তিতে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগণ বিভিন্ন দামের তিন কোটি শেয়ার সাব্যস্ত করল। উল্লেখ থাকে যে- যতক্ষণ পযন্ত তিন কোটি টাকা শেয়ার মূল্য উসূল হবে না ততক্ষণ পযন্ত কাজ শুরু করা অসম্ভব। তাই তিন কোটি টাকার শেয়ার বিক্রয় অবশ্যম্ভাবী। যখনই সকল শেয়ার লেনদেন শেষ হয়ে তিন কোটি টাকার সমষ্টি হবে, তখন কাজ শুরু করতে পারবে। এভাবে কোম্পানি শেয়ার বিক্রি করবে ও ক্রেতার শেয়ার ক্রয় করবে; কিন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত শেয়ার মূল্যে কোন বৈধ কাজে ব্যবহার না করে শেয়ার মূল্য বাড়ানো বৈধ নয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন লোকের মূল্যবৃদ্ধি করে বিক্রি করা বৈধ নয়। এখন পর্যন্ত কোম্পানির হাতে শুধু মাত্র নগদ টাকা রয়েছে, কোন কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশে বা বিদেশে কোনো কারবার শুরু করেনি। যাতে শেয়ার হোল্ডারের মুনাফা অর্জিত হয়। তাই এই প্রস্তাবিত কোম্পানি শেয়ারের ২য় স্তরের শেয়ার এর ক্রয়-বিক্রয় সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা তা পয়সার বিনিময়ে পয়সা অর্জন করা হয়েছে।
  • বাংলাদেশ ব্যাংকিং ব্যবস্তা যেহেতু সুদী, তাই তার তত্ত্বাবধানে সকল ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন অবৈধ।
  • সেখানে যদিও কিছু বৈধ পয়সা থাকে; কিন্তু অধিকাংশ অবৈধ ও সুদী, হালাল-হারামের অধিকাংশের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
  • এ ছাড়া ওই সকল কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান যাদের ওপর বাংলাদেশী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তিত্ব রয়েছে তাদের কানুন ও পরামর্শ তারা কাজ করে তাই এদের শেয়ার ক্রয় করা নাযায়েজ। কেননা তার পুঁজি অবৈধ, দিতীয়ত তাদের ব্যবসা শরীয়তের মূল নীতি অনুসারে পরিচালিত নয়।
  • যে সকল প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি ধোঁকাবাজি, বেইমানী, সুদ, জুয়া ও অবৈধ পদ্ধতিতে করবার করে তাদের শেয়ার লেনদেন বৈধ নয়। তেমনি যে সকল কোম্পানির শেয়ারের পিছনে কোনো সম্পদ নেই বরং শুধুমাত্র পুঁজি রয়েছে। শেয়ার হোল্ডার এর কাছে শুধু মাত্র রশিদ আছে সেই রশিদকে ১১ বা ১২ টাকা দিয়ে বিক্রয় করা হয়- তা নিখুদ সুদ যা হারাম। সে জন্য বলেছি এ সকল কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয়।
একটি প্রশ্ন: কিছু লোক বলেন, এ রকম বাংলাদেশে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না যেখানে বাস্তবে শরীয়তের নীতি মোতাবেক কারবার করে। এমতাবস্তা হলে তো শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে, যা অসম্ভব। উত্তর: বর্তমানে তার দুটি উত্তর হতে পারে। প্রথম উত্তর হলো- শেয়ার চালুকারী সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি তাদের শেয়ার লেনদেন ত্যাগ করে- তখন কেয়ামত হবে না, আসমান ভেঙে পাড়বে না। কেননা কারবার ও ব্যবসা বাণিজ্যর অসংখ্য প্রকার ও উপার্জনের উপকরণ রয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রচলিত চালু শেয়ার লেনদেন অর্ধশতাব্দির বেশি হচ্ছে না। এর আগে অন্য কারবার চলত যা এখনো সম্ভব। তাই যদি হালাল উপার্জনের নিয়ত থাকে এবং অতিরিক্ত সম্পদ একত্র করার লালসা না থাকে, তখন শেয়ার লেনদেন ত্যাগ করাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং নিজে-নিজেই এ সব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে যাবে। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা অন্য কোনো হালাল পথ বের করবে। মোটকথা, অবৈধ শেয়ার লেনদেন ছেড়ে দিলে দেশ ধ্বংস হবে না ও মানুষ অনাহারে মরবে না। দ্বিতীয় উত্তর হলো- যদিও ওই সকল প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিতে সরকারি কর্তৃত্ব রয়েছে, সরকার অবৈধ কারবার বন্ধ করতে রাজি নয়। এমতাবস্তায় মুসলমান নিজের ঈমান আমল হেফাজত করার জন্য ও পরকালে মুক্তির প্রত্যাশায় নিজে অবৈধ পদ্ধতি গ্রহণ করবে না। অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজনকেও তা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। সাধারণ মানুষকে এর ক্ষতি ও পাপ থেকে সতর্কতা করবে হবে। যাতে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের জিম্মাদারী আদায় হয়। তখন এ সকল গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে । * যে সকল কোম্পানির পিছনে নিশ্চিত বৈধ পুঁজি ও বৈধ কারবার রয়েছে। সুদ, জুয়া ও প্রতারণার কারবার নেই, কাগজে যেমন কারখানা রয়েছে বাস্তবেও কারখানা প্রতিষ্টিত ও চালু; যেখানে পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে দ্বীনদারীর সাথে, মাসে-ছয়মাসে বা বাত্সরিক লাভ-লোকসানের রশীদও আদায় করা হয়, তখন এতে অংশগ্রহণ বৈধ। তার শেয়ার লেনদেন বৈধ; কিন্তু যে কোম্পানির অবস্থা অজ্ঞাত বা যাদের নিকট কোম্পানির ব্যাপারে স্পষ্টতা নেই, সে সকল কোম্পানি মার্কেটে চালু ও মুনাফা দেখে অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়। কেননা যখন কোম্পানির সম্পরকে বিস্তারিত ধারণা নেই, তার পেছনে কি কি বস্তু রয়েছে তখন তার রশিদ এর সম্পদ অজ্ঞাত ও সেখানে শতকরা শতভাগ ধোঁকাবাজী ও প্রতারণার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু শেয়ার ক্রেতার নিকট সম্পদ থাকে না ও মালের ধারণাও থাকে না শুধুমাত্র কোম্পানির রশিদের উপর ভিত্তি করা হয়; তাই এ পরিমাণ অনুমানের উপর ভিত্তি করে শেয়ার লেনদেন অবৈধ। কেননা বর্তমানে শেয়ার লেনদেন মূলনীতি শূন্য। যেমন, (১) বিক্রিত বস্তু উপস্তিত থাকা জরুরি, তার রশিদ বিক্রি বাস্তব পণ্য না থাকলে বৈধ নয়। (২) বিক্রেতার নিকট সম্পদ থাকা জরুরী। অতপর ক্রেতা-বিক্রতার জন্য সম্পদ পরিমাণ অনুমান হওয়া আবশ্যক যাতে প্রতারণা না হয় যা বর্তমান শেয়ারে শূন্য। (৩) কোনো প্রকার ধোকা ও খেয়ানতের আশঙ্কা না থাকা চাই অথচ বর্তমান শেয়ার বাজারে ধোকা প্রাধান্য এবং যে সকল বাস্তব কোম্পানি শেয়ার বাজারে লেনদেন হয়, যদি সেখানে উল্লেখিত শর্ত সমূহ ও উসুল পাওয়া যায় তখন তার জন্য এ শর্ত বাকিতে যেন লেনদেন না হয়। বরং নগদ নগদ হতে হবে, ক্রেতা টাকা দিবে এবং চিন্তা ভাবনা করে সকল শর্তের সাথে শেয়ারপত্র উসুল করবে বা শেয়ার উসুল করে পরে মূল্য আদায় করবে, উভয় পক্ষ থেকে যেন ধরে না হয়। কিন্তু বর্তমান যুগে মার্কেটে যে রকম শেয়ার লেনদেন হয় সেখানে অন্য ত্রুটির সাথে পাওয়া যায় যে, শেয়ার ক্রয় কারী আজকের মূল্য হিসাবে শেয়ার ক্রয় করে এবং তার মূল্য সপ্তাহ পরে আদায় করে, শেয়ার মূল্য আদায়ের দিন উসুল করে। এ লেনদেন উভয় পক্ষ থেকে যেন ধারে হয়, রাসুলুল্লাহ (স:) তা থেকে নিষেধ করেছেন। অর্থ : রাসুল্লাহ স. একেবারে ধারে বিক্রি থেকে নিষেধ করেছেন। উল্লেখ্য, যে সকল কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে নিশ্চিতভাবে শেয়ারের পিছনে কোম্পানি বাস্তবে বিদ্যামান কিনা এবং তা বৈধ পুঁজি দিয়ে বৈধ পদ্ধতিতে কারবার হচ্ছে কি না এবং তার পক্ষ থেকে লাভ লোকসান, ঘোষণা, আমানতদারী ও খেয়ানতদারীর সাথে হচ্ছে কি-না জানা নেই। শুধুমাত্র জানা আছে যে, তার শেয়ার লেনদেন বাজার সবচেয়ে বেশি হয়। অধিকাংশ এর উপর ভরসা করে, এতে অংশগ্রহণ করলে অধিক মুনাফা নিশ্চিত ও ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু সেই ভিত্তিতে শেয়ার লেনদেন বৈধ নয়। কেননা আমাদের কারবারে হারাম ও অবৈধের সম্ভাবনা বেশি তাই হারামের সম্ভাবনা থেকে বাঁচতে হবে। তাই যতক্ষণ তার পেছনের মালের উপর নিশ্চিত হবে না শুধুমাত্র শেয়ার পত্রের চড়া মূল্য লেনদেন হয়- তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা একে উপার্জনের উপকরণ বানাচ্ছে, তাদের চিন্তা ভাবনা করা উচিত- সেই কারবার শরীয়তের মূলনীতি কি না ? সারকথা: শেয়ার লেনদেনের জন্য শর্ত (১) যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করা হচ্ছে- সে কোম্পানি বাস্তবে বিদ্যামান থাকতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পতি কারখানা মিল-ফ্যাক্টরি বা চালু পণ্যের কারবার থাকতে হবে। যেমন- সরকার দশ কোটি টাকার কোনো কোম্পানি অনুমতি দিয়েছে, দশ ব্যক্তি টাকা জমা করে জমিন ক্রয় করেছে, কারখানা বানিয়েছে, পণ্য প্রস্তুত করেছে। তখন এ রকম কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় শর্ত সাপেক্ষে বৈধ। এর বিপরীত যদি দশ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। শুধুমাত্র অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য, দশকোটি টাকার শেয়ার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে, তখন এ রকম কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বৈধ নয়। কেননা প্রত্যেক শেয়ারের বিপরীতে রশিদ ব্যাতিত কোনো সম্পত্তি বা সম্পদ নেই, যার ওপর মুনাফা নিয়ে বিক্রি করা যেতে পারে । (২) কোম্পানির পুঁজি বৈধ ও হালাল হতে হবে । (ক) অর্থাৎ বিদ্যামান কোম্পানি চালু কারবার বা কারখানা শেয়ার লেনদেন হচ্ছে, তার পুঁজি বৈধ ও হালাল হতে হবে। ঘুষ, ডাকাতি, চুরি, খেয়ানত, সুদ ও জুয়া দ্বারা অর্জিত হবে না। তাই সূদী প্রতিষ্ঠান যেমন- ব্যাঙ্ক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি বা ওই সকল কোম্পানি যেখানে সূদ বা জুয়ার কারবার রয়েছে তার শেয়ার লেনদেন বৈধ নয়। কেননা তার উপার্জন উপকরণ অবৈধ ও কারবার নাজায়েজ। তাই যে ব্যাক্তি সেই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করবে তা না জায়েজ ও হারাম কারবারের অন্তর্ভুক্ত হবে, যা মহাপাপ । (খ) কোম্পানির অংশীদারে সূদী কারবার বা প্রতিষ্ঠানের পুঁজি না থাকতে হবে। যেমন- ইন্সুরেন্স, কোম্পানি, ব্যাংক বা কোনো সুদী প্রতিষ্ঠান সেখানে অংশীদার না থাকতে হবে। যে কোম্পানি শেয়ার লেনদেন করা হচ্ছে- সেখানে যদি এ রকম কোম্পানি থাকে তখন তার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা ও মুনাফা গ্রহণ করা বৈধ নয়। (৩) কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কারবার বৈধ হতে হবে। (ক) অর্থাৎ যে কোম্পানি শেয়ার বাজারে ক্রয়-বিক্রয় চলছে। তার প্রথম দুটি শর্ত ব্যাতীত এও শর্ত রয়েছে যে, কোম্পানির কারবার বৈধ অর্থাৎ শরয়ী পদ্ধতিতে মুশারাকা-মুদারাবা করতে হবে। ফাসিদ শর্তের সাথে ফাসিদ কারবার না হতে হবে। যদি অবৈধ কারবার চলে তখন তার শেয়ার ক্রয় বৈধ হবে না। (খ) কোম্পানির কারবার বৈধ পণ্যের হতে হবে। হারাম ও অবৈধ পণের যেন না হয়। যেমন- মদ, ছবি, টিভি, ভি সি আর, ভিডিও ফিল্ম, সিনেমা ইত্যাদির কারবারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন বৈধ নয়। কেননা হারাম বস্তুর লেনদেনও হারাম। (৪) শেয়ার লেনদেনে বেচাকেনা সকল শর্ত প্রযোজ্য। অর্থাৎ উল্লেখিত শর্তের সাথে সেই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন বৈধ হওয়ার জন্য বেচা কেনার শর্ত ও খেয়াল করতে হবে। যেমন- কোনো ব্যাক্তি যে শেয়ার ক্রয় করতে যাচ্ছে তার দখলে আসতে হবে এবং অন্যকে সোপর্দ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। উল্লেখ্য, যে শেয়ার দখল পাওয়ার জন্য শেয়ার ক্রেতার নাম রেজিস্টার হওয়া জরুরি। রেজিস্টাররি হওয়ার আগে শুধু মাত্র মৌখিক চুক্তি, নন রেজিস্টারি শেয়ার লেনদেন বেশ-কম করে করা বৈধ হবে না। কেননা এ রকম শেয়ার বাস্তবে রসীদ, কোম্পানির বাস্তব শেয়ার নয়। কেননা, লাভ লোকসানের মালিক রেজিস্টারি মালিকানা হতে পারে। যেমন কেউ দশ টাকা করে তার জন্য একশ শেয়ার ক্রয় করার জন্য কাউকে বলেছে এবং সে বলে দিয়েছে এক সপ্তাহ পর সে টাকা দিয়ে তা উসুল করে নিবে। এখন এ লেনদেন সহিহ হবে না, কেননা সে মূল্যও দেয়নি, শেয়ার ও উসুল করেনি। এভাবে অবৈধ পদ্ধতিতে শেয়ার ক্রয়ের কারণে সে শেয়ার এর মালিক হবে না। এ রকম শেয়ারকে কম করে লেনদেন করা বৈধ না হারাম হবে? হাঁ, বিশুদ্ধ পদ্ধতি হলো প্রথমে শেয়ার রেজিস্ট্রি করবে। তারপরে মুল্য আদায় করবে বা মুল্য না দিলে শেয়ার উসুল করে নিবে, তখন সে তার শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পারবে। কেননা শেয়ার উসুল করার সাথে সাথে সে কোম্পানির অংশীদার হয়ে যায়। তখন অন্যান্য অংশীদারের অনুমতিক্রমে তার অপরের সাথে শেয়ার লেনদেন বৈধ হবে। (৫) মুনাফাকে সকল অংশীদারের মধ্যে শেয়ার অনুপাতে বন্টন করা। যেমন- কোম্পানিতে যে মুনাফা হবে, তা সকল অংশীদারের মধ্যে শেয়ার অনুপাতে বন্টন করে দেওয়া। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো কোম্পানি যদি মুনাফা থেকে ২০% টাকা ভবিষ্যত কারবারের কোনো সম্ভাব্য দুর্ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট করে, বাকি ৮০% টাকা বন্টন করে তখন সেই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বৈধ হবে না। কেননা তা শরয়ী মুশারাকার বিপরীত। এ পর্যন্ত মূল শেয়ারের লেনদেনের আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু যে সকল প্রতিষ্ঠান-কোম্পানির শেয়ার ও সার্টিফিকেট জুয়া ও ফটকা কারবার হয় এবং লটারির মাধ্যমে পুরস্কার দেয়া হয়- সেখানে অংশীদার হওয়া ও তার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।
  • তথ্য সূত্র : ইসলামী জীবন-পদ্ধতির মুলনীতি
  • মূল লেখক : হযরত মওলানা মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগামী, চট্টগ্রাম।অনুবাদক : মুফতি হুমায়ূন কবীর খালভী

আরও পড়ুন:

বিষয়: