ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৫ জুন ২০২৪

পাঁচ ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি


নিউজ ডেস্ক
64

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৮
পাঁচ ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি



রাজধানীর বনানী এলাকার একটি সুপারশপে কেনাকাটা করেছেন, এমন ৪৯ গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করেছে একটি চক্র। চক্রটি এসব গ্রাহকের তথ্য নিয়ে নতুন কার্ড তৈরি করে ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, দি সিটি, ইস্টার্ন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও ব্যাংক এশিয়ার গ্রাহক। ডেবিট ও ক্রেডিট-এ দুই ধরনের কার্ডই নকল করা হয়। ১০ মার্চ নকল কার্ড দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম ও পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) থেকে অর্থ তুলে নেওয়া হয়। গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয় ব্যাংকগুলো। গ্রাহকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছে সিটি ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলো ঘটনার বিস্তারিত জানতে তদন্ত শুরু করেছে। মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) গোলাম রব্বানী বলেন, কার্ড জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় সিটি ব্যাংক একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার বিস্তারিত জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে এটিএম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কার্ড জালিয়াতি হয়। সে সময় ইস্টার্ন, দি সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ২০০ কার্ড বাতিল করে। জানতে চাইলে দি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, বনানীর স্বপ্নের একটি আউটলেট থেকে এসব কার্ড ক্লোন হয়েছে। এরপর বিভিন্ন এটিএম থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। আমরা মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছি। এসিআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্বপ্নের আউটলেট থেকে কার্ডের তথ্য চুরি হয়েছে, এর কোনো প্রমাণ ব্যাংকগুলো এখনো দিতে পারেনি। ব্যাংক সূত্রগুলো জানায়, ইসরাত জাহান, সাজিয়া চৌধুরী, অপরূপা চৌধুরী গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বনানীর ১১ নম্বর সড়ক ও কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের ‘স্বপ্ন’ থেকে কেনাকাটা করেছিলেন। এরপর ১০ মার্চ তিন দফায় এবি ব্যাংকের কালশী এলাকার এটিএম বুথ থেকে ইসরাত জাহানের কার্ডের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন হয়। টাকা উত্তোলনের খুদে বার্তা পাঠানোর পর তিনি বিষয়টি সিটি ব্যাংককে অবহিত করেন। একইভাবে অন্য ৪৯ গ্রাহকের কার্ডের মাধ্যমেও টাকা উত্তোলন করা হলে তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপরই ব্যাংক পাঁচটি এটিএম সেবা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখে। একইভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের ৯ গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করে সাড়ে ৬ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয় ব্যাংকটি। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাক ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জারা জাবীন মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা স্বপ্নের সঙ্গে কাজ করছি। আর গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ ইস্টার্ন ব্যাংকের ১১ গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। ইস্টার্ন ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জিয়াউল করিম বলেন, সব ব্যাংকের কার্ডে ইএমভি প্রযুক্তি থাকলে কার্ড জালিয়াতি করেও এভাবে অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব হতো না। ব্যাংক এশিয়ার ৪ গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করে ১ লাখ ৫ হাজার তুলে নিয়েছে চক্রটি। এ ঘটনার তদন্ত করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলেই বিস্তারিত জানা যাবে। সিটি ব্যাংকের ২২ গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করে ৬ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে চক্রটি। এর মধ্যে ১৬ জন ক্রেডিট কার্ড ও ৬ জন এটিএম কার্ডের গ্রাহক। কার্ড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সব কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত করতে হবে। সব ব্যাংক এ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করলে কার্ড জালিয়াতি কমে আসবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক রয়েছে। আর ডেবিট কার্ড রয়েছে প্রায় ৬০ লাখ। দেশের ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন:

বিষয়: