ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৫ জুন ২০২৪

কোম্পানির ইচ্ছায় আর বোনাস শেয়ার ঘোষণা নয়, আসছে পরিবর্তন


নিউজ ডেস্ক
69

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০১৭
কোম্পানির ইচ্ছায় আর বোনাস শেয়ার ঘোষণা নয়, আসছে পরিবর্তন



সিনিয়র রিপোর্টার : বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ওপর কিছু নিয়মকানুন বেঁধে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দিতে চাইলে কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। পাশাপাশি লভ্যাংশের অর্থ কী কাজে ব্যয় করা হচ্ছে তাও জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে। সম্প্রতি মতামতের জন্য প্রকাশিত করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডসে (সিজিসি) এমন বিধান রেখেছে বিএসইসি। কোম্পানি পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পরিচালনা পর্ষদ সম্পর্কিত নীতিমালায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে কমিশন। বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন সংশোধন করে সিজিসির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে সুশাসন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতেই কোডটি চূড়ান্ত হবে। মতামতের জন্য প্রকাশিত সিজিসি থেকে জানা যায়, উন্নত দেশের আদলে প্রস্তুত খসড়া কোডসের শুরুতেই পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১ নং ধারা অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কমপক্ষে পাঁচজন ও সর্বোচ্চ ২০ জনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারার ক্লজ ১ অনুযায়ী একটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য অনিবাসী বাংলাদেশী হওয়া চলবে না উল্লেখ করা হয়েছে। পর্ষদে কমপক্ষে একজন নারী সদস্যকে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৭ নং ক্লজের মাধ্যমে। মনোনীত পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে এ ধারার ৬ নং ক্লজে। আইনের ১ নং ধারার উপধারা ২-এ স্বতন্ত্র পরিচালকের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে প্রতি পাঁচজন পরিচালকের বিপরীতে একজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। তবে কোম্পানির পর্ষদে মোট পরিচালকের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে পারবে না। কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে ব্যর্থ হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সর্বনিম্ন সীমা অনুযায়ী কোম্পানিটির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। ব্যাংকের পর্ষদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক ও কমপক্ষে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবে। পরিচালক ২০ জনের কম হলে স্বতন্ত্র পরিচালক কমপক্ষে দুজন থাকতে হবে। স্বতন্ত্র পরিচালক কোম্পানির কোনো শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকের সঙ্গে কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স এবং হেড অব আইসিটির পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারবে না। পাশাপাশি তারা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক, স্টেকহোল্ডার কিংবা কর্মকর্তা হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকদের বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি, অপরাধ, শেয়ারবাজার কারসাজি ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএসইসি এবং এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন লাগবে। ৯০ দিনের বেশি স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ খালি রাখা যাবে না। একজন ব্যক্তি টানা দুই মেয়াদে (ছয় বছর) স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন। এরপর এক মেয়াদ (তিন বছর) বাদ দিয়ে ওই ব্যক্তি পুনরায় স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার জন্য যোগ্য হবেন। অন্যদিকে একই ব্যক্তি পাঁচটির বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না বলেও বলা হয়েছে একই উপধারায়। প্রথম ধারার উপধারা ৫ অনুযায়ী একই ব্যক্তি একাধিক তালিকাভুক্ত কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে থাকতে পারবেন না। পাশাপাশি এক ব্যক্তি একই সময়ে কোনো কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি পদে থাকতে পারবেন না। একই ধারায় ৬ নং উপধারায় লভ্যাংশের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির মুনাফা অথবা অবণ্টিত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে। আন-রিয়েলাইজড গেইন, কম্প্রেহেনসিভ আয় অথবা মূলধন ভেঙে লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দেয়া যাবে না। অন্যদিকে যেকোনো কোম্পানিকে স্টক লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে তার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। একই সঙ্গে স্টক লভ্যাংশের অর্থ কোনো কাজে ব্যয় হচ্ছে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তাও বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে। উল্লেখ্য, যথাযথ কারণ ছাড়াই বোনাস শেয়ার দিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করার সংস্কৃতির বিপক্ষে বিনিয়োগকারী ও বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের অবস্থান। অকারণে বোনাস শেয়ার দিয়ে দায় সারার পথ বন্ধ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন:

বিষয়: