ডেল্টা লাইফে নতুন পর্ষদ গঠনের সুপারিশ প্রশাসকের

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে একটি নতুন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে সুপারিশ করেছেন কোম্পানিটির প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান। এ বিষয়ে তিনি সম্প্রতি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে পর্ষদ গঠনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে এটি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ডেল্টা লাইফে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান এ বছরের ২৮ এপ্রিল বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বীমা আইনের অধীনে আইডিআরএর কাছে পাঠানো প্রশাসকের প্রতিবেদন ও মতামত অবলোকন করা বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বিদ্যমান বাস্তবতায় স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা ও কোম্পানির অংশীজনদের সার্বিক স্বার্থে প্রশাসকের প্রতিবেদন ও মতামত বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত নতুন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠন করে তাদের কাছে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব অর্পণ করা প্রয়োজন। প্রশাসকের ব্যবস্থাপনা একটি অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা, যা দীর্ঘদিন চলা সমীচীন নয়।

চিঠিতে আরো বলা হয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যারা এ কোম্পানির পলিসিহোল্ডার তারা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ তারা বীমা করা ও তা চলমান রাখার উদ্দেশ্যে পর্ষদ থাকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। এ অবস্থায় প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদন ও মতামত বিবেচনায় নিয়ে ডেল্টা লাইফের জন্য একটি উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠনের বিষয়টি জরুরিভাবে বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন প্রশাসক এ বিষয়ে জানতে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক মো. কুদ্দুস খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কোনো কিছু বলতে রাজি হননি।

সাধারণ বীমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে  আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান-উল আবেদীন মোল্লাকে কোম্পানিটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। সেদিন বিকালেই পুলিশের সহায়তায় কোম্পানিটির কার্যালয়ে গিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মধ্যেই তার ওপর আস্থা হারিয়ে ডেল্টা লাইফের পরামর্শকের দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে কোম্পানিটির নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনিও পদত্যাগ করেন। তার জায়গায় আইডিআরএর সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খানকে সর্বশেষ কোম্পানিটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছিল কোম্পানিটির পর্ষদ। রিটের শুনানি শেষে এ বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের বিচারপতি খসরুজ্জামান ও মো. মাহমুদ হাসানের যৌথ বেঞ্চ কোম্পানিটিতে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসক নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় ডেল্টা লাইফের আগের পর্ষদ আবারো কোম্পানিটির দায়িত্ব গ্রহণ করে। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আইডিআরএর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আপিল বিভাগের ফুল কোর্টে বিষয়টির নিষ্পত্তির আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদালত। এ আদেশের ফলে ডেল্টা লাইফে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসক তার দায়িত্ব পুনরায় ফিরে পান।

প্রসঙ্গত, পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে কোম্পানিটির পর্ষদ। পাশাপাশি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়। যা বর্তমানে দুদক অনুসন্ধান করে দেখছে। অন্যদিকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাছাড়া এরই মধ্যে কোম্পানিটির ওপর আইডিআরএর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিশেষ ও অনুসন্ধানমূলক নিরীক্ষা করানো হয়েছে এবং এতে বেশকিছু অনিয়মও উঠে এসেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ নিরীক্ষায়ও বেশকিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইডিআরএ ও ডেল্টা লাইফের পর্ষদের চলমান বিবাদ দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে একটি বৈঠকও হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বড় একটি শিল্পগোষ্ঠীর ডেল্টা লাইফের শেয়ার কিনে পর্ষদে আসার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।