ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৫ জুন ২০২৪

সুকুক বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে


নিউজ ডেস্ক
101

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সুকুক বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে



সুকুক বন্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির।

‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২১) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সূচনা বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি আরমান হক। ওয়েবিনারের প্রতিপাদ্য নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় অংশগ্রহণ করেন।

মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, কভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইনের ওপর বেশি মাত্রায় চাপ পড়ায় আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ও কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানিকারকদের ঋণ সহায়তা ও আমদানীকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস করা হলে, সাধারণ জনগণ এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। এ সময় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্তত একটিকে কৃষি খাতে পণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

সুকুকের মতো আরো বন্ড ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে রিজওয়ান রাহমান বলেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা যেন ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে আরো বেশি হারে ঋণ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও তিনি সিএমএসএমইদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর জোরারোপ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, কভিড মহামারী ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি সব স্তরের জনগণের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু নীতসহায়তার পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সুকুক বন্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশে ব্যাংক পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যুগোপযোগী সিদ্ধন্ত গ্রহণ করবে।

গভর্নর বলেন, রফতানি বহুমুখীকরণ তহবিলের সম্প্রসারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিডার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার আরো উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় উল্লেখজনক হারে কমানো সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কভিড মহামারী মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোরারোপ করেন। তিনি সিএমএসএমই খাতকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে এ খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে দেশের কর কাঠামাকে সাময়িক সময়ের জন্য পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। তা নাহলে সামনের রমজানে আরো ভোগান্তি বাড়বে। শিল্প খাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় আরো সম্প্রসারণের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কৃষিপণ্য প্যাকেজিং এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই সভাপতি সিএমএসএমইদের জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন এবং এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এমসিসিআই সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, কভিড মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত হবে ঘোষিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন করা।এছাড়াও গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রভৃতি খাতে প্রস্তাবিত দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং জনগনের জীবনযাত্রায় তা নেতিবাচক প্রভাব ফলবে, এমতাবস্থায় ‘গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ এবং ‘এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড’-এর জমানো তহবিল ব্যবহারের প্রস্তাব করেন।

এফআইসিসিআই সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, রিয়েল এস্টেট শিল্পের সঙ্গে নির্মাণ, সার্ভিস, ফাইন্যান্সিয়াল ও ইন্স্যুরেন্স প্রভৃতি খাত জড়িত থাকায় এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশী -বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-এর ওপর আরো বেশি হারে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি বিদ্যমান করহার যৌক্তিকভাবে কমানোর দাবি জানান ফিকির সভাপতি। মুক্ত আলোচনায় পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত বেশি, যার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক এবং এ অবস্থা উত্তরণে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।


আরও পড়ুন:

বিষয়: