ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৫ জুন ২০২৪

পরিবেশবান্ধব শিপইয়ার্ডের যাত্রা পিএইচপির হাত ধরে


নিউজ ডেস্ক
85

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২১
পরিবেশবান্ধব শিপইয়ার্ডের যাত্রা পিএইচপির হাত ধরে



২০১৭ সালে পিএচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠান পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ড হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রতিষ্ঠানটিকে জাহাজ কাটার জন্য গ্রিন সনদ দেয় ইতালির আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি (রিনা)। পিএইচপির ইয়ার্ডটি হলো হংকং কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম সুরক্ষামূলক শিপইয়ার্ড। তবে তারা গ্রিন ইয়ার্ড করার কর্মযজ্ঞ শুরু করে আরও দুই বছর আগে।
সেই গল্প শোনা যাক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জহিরুল ইসলামের মুখে। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৫ সাল থেকে পরিবেশসম্মতভাবে জাহাজ কাটার কাজে মনোনিবেশ করি। এর জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর আমরা পরিবেশসম্মত সনদ গ্রিন সনদ পাই। এ জন্য খরচ হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। গ্রিন ইয়ার্ড করলে জাহাজ কেনায় কিছু ছাড় পাওয়া যায়। তবে এর আনুষঙ্গিক খরচ অনেক। তারপরও আমরা খুশি। কারণ, এখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কাজ হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি অনেক কমেছে।’
পিএইচপি গ্রিন ইয়ার্ড হওয়ার পর প্রথম জাহাজ আনা হয় পরের বছরের (২০১৮) মাঝামাঝিতে। এটাতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ছাড় মেলে। ওরি ভিটোরিয়া নামের জাহাজটি কাটা হয় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। জাহাজটি হংকং কনভেনশন অনুযায়ী গ্রিন তালিকাভুক্ত। ১৯৮৯ সালে তৈরি বিশেষায়িত জাহাজ ওরি ভিটোরিয়া ২৭ হাজার মেট্রিক টন ওজনের। জাপানের নিপ্পন কোকান শিপইয়ার্ডে এটি তৈরি করা হয়েছিল। পরিবেশবান্ধব এই শিপইয়ার্ডের বৈশিষ্ট্য হলো, পরিবেশ সুরক্ষা ও জাহাজ কাটায় যুক্ত শ্রমিকদের নিরাপত্তা। পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের এমডি বলেন, এই কারখানায় বছরে প্রায় দেড় লাখ টন লোহা উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। তবে গত বছর করোনার মধ্যে এক লাখ টন লোহা উৎপাদিত হয়েছে। এরপর এ পর্যন্ত এই জাহাজভাঙা শিল্পকারখানায় ১৫০টির মতো জাহাজ কাটা হয়েছে। বর্তমানে এই ইয়ার্ডে কাটা হচ্ছে কোরিয়ান পতাকাবাহী একটি পরিবেশসম্মত জাহাজ।
সম্প্রতি সরজেমিন দেখা গেছে, পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ভেতরে এক পাশে রয়েছে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। সেখানে প্রত্যেক শ্রমিকের বেসিক কিছু ডেটা সংরক্ষিত রয়েছে। সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একটু এগোলে গড়ে তোলা হয়েছে তরল বর্জ্য শোধনাগার কক্ষ। এ ছাড়া রয়েছে ওয়েল ওয়াটার পৃথক্‌করণ ও শ্রমিকদের সুরক্ষা সরঞ্জামের কক্ষ। বর্তমানে এখানে ২২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তার মধ্যে অর্ধেক স্থায়ী। এই সংখ্যা অন্যদের চেয়ে অনেক কম। জানতে চাইলে কারখানার স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা লিটন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এখানে মেশিনারিজ কাজ অনেক বেশি। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সব কাজ হয়। যার জন্য এখন বেশি লোক দরকার হয় না। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কম। কর্মীদের বিদেশি প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।’ উন্নয়ন সংগঠন ইপসার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্রিন ইয়ার্ডে সবকিছু নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেশে পিএইচপি অগ্রগামী। অন্যদের গ্রিন ইয়ার্ডে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করলে দুর্ঘটনাও কমবে।
জহিরুল ইসলাম বলেন, জাহাজভাঙা কারখানার সেই চিরায়ত ছবি, কাঁধে করে শ্রমিকেরা নিয়ে যাচ্ছেন লোহার বড় বড় খণ্ড, এমনটা দেখা মেলে না পিএইচপিতে। এই কারখানায় এখন যন্ত্রের ব্যবহার খুব বেশি। ম্যাগনেটিং ক্রেন রয়েছে ১০টি। এগুলোর মাধ্যমে লোহার খণ্ড এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে চারটি হাইড্রোলিক ক্রেন, সাতটি হুইচসহ নানা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। পিএইচপি শিপ ব্রেকিংয়ের এমডি বলেন, ‘নিত্যনতুন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করি আমরা। ইতালির পর জাপানেরও স্বীকৃতি পেয়েছি। গ্রিন ইয়ার্ডের ক্ষেত্রে খরচ থাকলেও মানসিক একটা শান্তি রয়েছে। অনেকের ইচ্ছা আছে এ রকম ইয়ার্ড করার। তবে খরচের দিকটাও একটা বিষয়। তাই সরকার আয়করে ছাড়সহ কিছু সুবিধা দিলে অনেক মালিকই পরিবেশবান্ধব শিপইয়ার্ড স্থাপনে উৎসাহী হবেন।’ সার্বিকভাবে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিএইচপি দেশের প্রথম গ্রিন ইয়ার্ড। তাদের দেখাদেখি অনেকেই এগিয়ে আসছে। তাদের আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। আর ২০২৩ সালের মধ্যে সব ইয়ার্ডকে গ্রিন, অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব করার একটা বাধ্যবাধকতাও বেঁধে দিয়েছি। সে অনুযায়ী ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান এখন কাজ শুরু করেছে।’ এদিকে, বিশ্ব নৌ দিবস উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পিএইচপি রিসাইক্লিংকে পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন:

বিষয়: