আফগানিস্তানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হয়ে রেকর্ডের পাতায় নাম স্থায়ী করে ফেলেছেন রহমত। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার অপেক্ষায় দিন শেষ করেছেন আসগর। অপরাজিত আছেন ৮৮ রানে।
প্রথম দিনেই বাংলাদেশের হয়ে হাত ঘুরিয়েছেন ৮ বোলার, তাদের ৭ জনই স্পিনার। কিন্তু শুরুটা ভালো করলেও সেটি পরে ধরে রাখতে পারেননি স্পিনাররা।
বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন দুই উইকেট। প্রথমটি নিয়ে গড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১০০ উইকেটের রেকর্ড। দুটি উইকেট নিয়েছেন তরুণ অফ স্পিনার নাঈম হাসান। অন্যটি মাহমুদউল্লাহর।
স্পিনারদের সৌজন্যেই প্রথম সেশনে আফগানদের দারুণ চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। একাদশে স্পেশালিস্ট পেসার নেই একজনও। তাইজুল ও সাকিব আল হাসান শুরু করেন নতুন বলে আক্রমণ। চতুর্থ ওভারে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরপর চলতেই থাকে স্পিন প্রদর্শনী। তবে শুরুতে ঔজ্জ্বল্য থাকলেও ক্রমে বিবর্ণ হয়ে ওঠেন স্পিনাররা।
সকালে টস করতে নেমেই রশিদ খান গড়েন ইতিহাস। ২০ বছর ৩৫০ দিন বয়সে নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে যান টেস্ট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক। টস ভাগ্যকে পাশেও পান এই লেগ স্পিনার, আফগানরা নামে ব্যাটিংয়ে। দুই আফগান ওপেনারের শুরুটা ছিল ভীষণ সাবধানী। প্রথম বাউন্ডারি আসে ম্যাচের দশম ওভারে।
প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ১৫। প্রথম ঘণ্টায় ১৬ ওভারে ছিল কেবল ২৫ রান।
সাবধানী শুরুর পরও খুব বড় হয়নি উদ্বোধনী জুটি। তাইজুলের ধ্রুপদী এক ডেলিভারিতে ৯ রানে বিদায় নেন ইহসানউল্লাহ।
দ্বিতীয় ঘণ্টায় রানের গতি একটু বাড়ায় আফগানরা। অভিষিক্ত ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান পায়ের ব্যবহার শুরু করেন একটু। রহমতও খেলতে থাকেন স্বচ্ছন্দে।
এই জুটিও ভাঙেন তাইজুল। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ২১ রানে থামে ইব্রাহিমের সম্ভাবনাময় ইনিংসটি।
পরের জুটিতে হাশমতউল্লাহ শহিদি ও রহমত খেলছিলেন সাবলীলভাবেই। কিন্তু লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে গড়বড়।
বিরতির আগে বৈচিত্রের জন্য মাহমুদউল্লাহর হাতে বল তুলে দেন সাকিব। এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা মাথার ও গোছানো ব্যাটসম্যান হলেও ভুল করে বসেন শহিদি। বাইরের বল খেলতে গিয়ে তুলে দেন স্লিপে সৌম্যর হাতে।
লাঞ্চের পর খুব একটা ভুলের পথে পা বাড়াননি রহমত ও আসগর। দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। অস্বস্তির রেশ ছিল না তাদের ব্যাটিংয়ে। রান বাড়িয়েছেন অনায়াসে।
বাংলাদেশের স্পিনাররাও হারান ধৈর্য্য। টানা ভালো জায়গায় বল রেখে যেতে পারেননি। আলগা বল পেলেই ফায়দা নেন রহমত ও আসগর।
দুজনই অবশ্য বেঁচেছেন একবার করে। ৯ রানে মিরাজের বলে শর্ট লেগে আসগরের কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম। রহমতকে ৯৪ রানে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করতে পারেননি সাকিব।
দ্বিতীয় সেশনে পড়েনি কোনো উইকেট। শেষ সেশনের শুরুতেই রহমতের ইতিহাস গড়া মুহূর্ত। আগের টেস্টেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৮ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। এবার করলেন সেঞ্চুরি। নাঈমকে বাউন্ডারিতে ১৮৬ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।
বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে সেই ওভারেই। সেঞ্চুরির পরের বলেই আলগা ড্রাইভ খেলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১০২ রান করা রহমত। ভাঙে আসগরের সঙ্গে তার ১২০ রানের জুটি।
ওই ওভারেই নাঈমের স্কিড করা বলে লাইন মিস করে বোল্ড মোহাম্মদ নবি।
সেই জোড়া ছোবলের পর আবার হতাশার প্রহর। সেশনের বাকিটায় দুর্দান্ত ব্যাট করে আফগানদের এগিয়ে নেন আসগর ও আফসার জাজাই। দ্বিতীয় নতুন বলেও বাংলাদেশ পায়নি সাফল্য।
দিনশেষে আসগর ও আফসারের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৭৪। আসগর পাচ্ছেন সেঞ্চুরির সুবাস, ৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৮৮ রানে। কিপার-ব্যাটসম্যান আফসার জাজাই দিন শেষ করেছেন ৩৫ রানে।
দুজনের জুটি দীর্ঘায়িত করেছে বাংলাদেশের হতাশার প্রহর। সকালের ঔজ্জ্বল্য দিনশেষে হয়ে গেছে বিবর্ণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৯৬ ওভারে ২৭১/৫ (ইব্রাহিম ২১, ইহসানউল্লাহ ৯, রহমত ১০২, শহিদি ১৪, আসগর ৮৮*, নবি ০, আফসার ৩৫*; তাইজুল ৩১-৪-৭৩-২, সাকিব ১৭-১-৫০-০, মিরাজ ২২-৪-৫৯-০, নাঈম ১৩-০-৪৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৯-১, সৌম্য ৪-০-২৬-০, মুমিনুল ৪-০-৯-০, মোসাদ্দেক ১-০-১-০)।