ডাবলিনের মালাহাইড ক্রিকেট ক্লাবে সোমবার, ১৩ মে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৭ রানে আটকে রেখে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ বল বাকি রেখে।
জয়ের ব্যবধান আগের ম্যাচের মতো না হলেও জয়ের ধরন একইরকম। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেভাবে দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ। কমতি খানিকটা রয়ে গেল স্রেফ রান তাড়ায়। আগের ম্যাচের মতো অতটা ‘ক্লিনিক্যাল’ হলো না ব্যাটিং।
টসকে এ দিনও পক্ষে পায়নি বাংলাদেশ। তবু ম্যাচ পক্ষে আনার কাজটা অনেকটাই এগিয়ে রাখেন বোলাররা। ব্যাটিং উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগ্রাসী ব্যাটিং লাইনআপকে বেঁধে ফেলে আড়াইশর আগেই।
আগের ম্যাচের মতোই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিয়েছেন ৩ উইকেট। আগের ম্যাচের খরুচে বোলিংকে পেছনে ফেলে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার ৪টি। একটি করে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ আটকে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে।
সাইফ উদ্দিনের চোটে ওয়ানডে অভিষেকের সুযোগ পাওয়া আবু জায়েদ চৌধুরী অবশ্য নজর কাড়ার মতো কিছু করতে পারেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটায় অবশ্য ছিল ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত। সুনিল আমব্রিসের সৌজন্যে ৫ ওভারেই ক্যারিবিয়ানরা তুলেছিল ৩৫ রান।
মাশরাফির প্রথম ছোবল তখনই। স্লিপে সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন ১৯ বলে ২৩ রান করা আমব্রিস।
তিনে নামা ড্যারেন ব্রাভোর উইকেটও পেতে পারতেন মাশরাফি। কিন্তু সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি মিরাজ। সেটি অবশ্য দ্রুতই পুষিয়ে দেন এই অফ স্পিনার। নিজেই ফিরিয়ে দেন ব্রাভোকে।
পাওয়ার প্লের মধ্যে এসেও দারুণ বোলিং করেছেন মিরাজ। মিডল অর্ডারে জোড়া শিকার ধরেন মুস্তাফিজ। সাকিবের বোলিংয়ে রান করার পথই পাচ্ছিল না ক্যারিবিয়ানরা। ৯৯ রানে হারায় তারা ৪ উইকেট।
হোপ ও হোল্ডারের জুটি সেখান থেকে উদ্ধার করে দলকে। তাড়াহুড়ো না করে ধীর পায়ে এগিয়ে নেন দলকে। সময়ের সঙ্গে রানের গতিও বাড়ান দুজন। জুটির ১০০ আসে ১১৩ বলে।একটি উইকেট যখন খুব প্রয়োজন বাংলাদেশের, আবার ত্রাতা হয়ে আসেন মাশরাফি। ফিরিয়ে দেন ১০৮ বলে ৮৭ রান করা হোপকে।
হোল্ডার ফিফটি স্পর্শ করেছিলেন ৫৭ বলে। পঞ্চাশের পর দারুণ একটি ছক্কা মারেন মাশরাফিকে। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে থামান বাংলাদেশ অধিনায়ক। রাউন্ড দা উইকেটে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ৬২ রানে বিদায় করেন হোল্ডারকে।
শেষ দিকে এক ওভারে দুটি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। লোয়ার অর্ডারদের টুকটাক অবদানে ক্যারিবিয়ানরা যায় আড়াইশর কাছে।
রান তাড়ায় এমনিতেই চাপ ছিল না। দুই ওপেনার আরও নির্ভার করে দেন বাংলাদেশকে। উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ আসে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
৫৬ রানের জুটি ভাঙে তামিম ইকবাল ক্ষনিকের জন্য অচেনা হয়ে ওঠায়। অফ স্পিনার অ্যাশলি নার্সকে টানা দুটি চারের পর আবার বেরিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। এ ধরনের খামখেয়ালি করতে ইদানিং খুব একটা দেখা যায়না তাকে। খেসারত দিয়েছেন ২১ রানে আউট হয়ে। দলের এগিয়ে চলা তাতে থামেনি। অর্ধশত রানের জুটি আসে পরের উইকেটেও। সৌম্যর সঙ্গী এবার সাকিব। কিন্তু এই জুটির শেষটাও ঠিক আগেরটির মতো। নার্সকে বাউন্ডারি মারার পরই আবার বেরিয়ে খেলতে গিয়ে আলতো ক্যাচে ফেরেন ২৯ রান করা সাকিব।
ম্যাচে বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থেই খানিকটা চাপের সময় আসে এরপরই। টানা দ্বিতীয় ফিফটির পর সৌম্যও (৬৭ বলে ৫৪) উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন নার্সকে। রান তখন ৩ উইকেটে ১০৭। উইকেটে থিতু না হওয়া দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। সেই দুজন মিলেই সরিয়ে দেন চাপ। দলকে এগিয়ে নেন জয়ের পথে। অবশ্য ৭ রানে নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান মিঠুন। রান নিতে গিয়ে পিছলে পড়েছিলেন মাঝ উইকেটে। কিন্তু রান আউটের অনেক সময় থাকলেও নার্সের থ্রো চলে যায় কিপারের মাথার ওপর দিয়ে। এই জুটিতে আসে ৮৩ রান। দুটি করে চার ও ছক্কায় মিঠুন আউট হন ৪৩ রানে।
বাংলাদেশের জয় নিয়ে অবশ্য আর সংশয় জাগেনি। মাহমুদউল্লাকে নিয়ে মুশফিক গড়েন আরেকটি পঞ্চাশ রানের জুটি। নিজেও পেরিয়ে যান ফিফটি। অপেক্ষা যখন ম্যাচ শেষের, কেমার রোচকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন ৬৩ রান করা মুশফিক। খানিক পরই ধরা দেয় জয়। আউট হয়ে ফেরার সময় নিজের ওপর ক্ষোভ ঝারছিলেন মুশফিক। আক্ষেপ কিছুটা থাকল দলেরও। কাজ শেষ করে ফিরতে পারতেন তিনি। শেষ করতে পারতেন মিঠুন। টপ অর্ডারে একজন অন্তত খেলতে পারতেন লম্বা ইনিংস।
সেসব হয়নি। তাই নিখুঁত হয়নি বাংলাদেশের রান তাড়া। তবে এর মধ্যেও ইতিবাচক কিছু খুঁজলে, বেশ কজনের ব্যাটিং অনুশীলন অন্তত হলো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৪৭/৯ (হোপ ৮৭, আমব্রিস ২৩, ব্রাভো ৬, চেইস ১৯, কার্টার ৩, হোল্ডার ৬২, অ্যালেন ৭, নার্স ১৪, রিফার ৭, কটরেল ৮*, রোচ ৩*; আবু জায়েদ ৯-১-৫৬-০, মাশরাফি ১০-০-৬০-৩, মিরাজ ১০-০-৪১-১, মুস্তাফিজ ৯-১-৪৩-৪, সাকিব ১০-১-২৭-১, সৌম্য ২-০-১৫-০)।
বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৪৮/৫ (তামিম ২১, সৌম্য ৫৪, সাকিব ২৯, মুশফিক ৬৩, মিঠুন ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ৩০*, সাব্বির ০*; রোচ ৬-০-৪৬-১, কটরেল ৯.৮-০-৩৮-০, নার্স ১০-০-৫৩-৩, চেইস ৬-০-২৪-০, অ্যালেন ৩-০-১১-০, হোল্ডার ৮-১-৪৩-১, রিফার ৫-০-৩১-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান