স্থিতিশীলতা রক্ষায় দরকার ‘সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার’ সংশোধন
নিউজ ডেস্ক
61
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০১৮
সিনিয়র রিপোর্টার : দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার গণনা বিষয়টি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়াতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার’ হিসেবে গণনা করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার’ গণনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা কমেছে।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেনের বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এমন অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্সদের সংগঠন ডিবিএ ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্সদের সংগঠন বিএমবিএ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার এসব কথা জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ডিবিএর সিনিয়র সহসভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম ও বিএমবিএর সিনিয়র সহসভাপতি আহসান উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখা তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এক্সপোজার ইস্যুতে ডিবিএ অনেক আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়কে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে পুুঁজিবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা সংশোধন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন সিকিউরিটিজকে ব্যাংকের এক্সপোজার হিসেবে গণনা না করা, কৌশলগত বিনিয়োগ বা লেনদেন না হওয়া সিকিউরিটিজকে এক্সপোজার হিসেবে গণনা না করা, পুঁজিবাজারের লিমিট গণনার ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে করা ও ব্যাংকগুলো তাদের সাবসিডিয়ারিকে দেয়া ঋণের যে অংশ ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করেছে তা এক্সপোজার হিসেবে গণনা না করা অন্যতম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ডিবিএ সভাপতি আরো বলেন, বুধবার অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠকে ব্যাংকের এক্সপোজারসহ বাজার উন্নয়নে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে ব্যাংকের এক্সপোজার বিষয়ে সহজ সিদ্ধান্ত নেয়া ও আইসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয় মেনে নিলে শেয়ারবাজার দ্রুত সময়ের মধ্যে গতিশীল হবে বলে আমরা আশা রাখি।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজার অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি জায়গা। বাজারকে স্থিতিশীল করার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব আলোচ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি বর্তমানে যে তারল্য সংকট চলছে, সেদিকেও দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বর্তমানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও বেশি হলেও সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা কম। এর মানে হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে বেশ বড় অংকের বিনিয়োগযোগ্য তারল্য রয়েছে। তাই এটিকে কাজে লাগানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারির মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলো তারল্য সরবরাহ করতে পারে। তাছাড়া সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমেও সরকারি ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে ভালো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা দ্রুতই এ বিষয়গুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করব।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার গণনার বিষয়টি সহজতর করতে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগে সমন্বিত ভিত্তি বিবেচনা না করে একক ভিত্তি বিবেচনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত ২০১৩)-এর বাধ্যবাধকতার বাইরে ২০১৪ সালে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে পুঁজিবাজার ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ভিত্তি গণনা করার বিধান হয়। ফলে পুঁজিবাজারে তারল্যপ্রবাহ সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এক্সপোজারের বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন শেয়ার, বন্ড ডিবেঞ্চার প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডকে ব্যাংকের এক্সপোজের হিসাবের বাইরে রাখার ব্যবস্থা নেয়া। বর্তমানে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ২৬-এর ক ধারায় সব সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া এক্সপোজারের মধ্যে তালিকাভুক্ত হলেও যেসব সিকিউরিটিজ মেয়াদপূর্তির আগে লেনদেন হয় না তা এক্সপোজার হিসেবে গণনা না করা, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সপোজার লিমিট গণনা করার ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজারমূল্য অনুযায়ী গণনা না করে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করা ও ব্যাংকগুলো তাদের সাবসিডিয়ারিকে দেয়া ঋণের যে অংশ ব্যাংকিং ব্যবসায় বিনিয়োগ হয় তা এক্সপোজার হিসেবে গণনা না করার অনুরোধ করা হয়েছে।
আইসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, পুুঁজিবাজারের সহায়তার জন্য আইসিবি গঠন করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার’ গণনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেছে। এমতাবস্থায় আইসিবিকে সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজারের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
আরও পড়ুন:
মার্কেট টাইমস সম্পর্কিত আরও
দিনভর উত্থান দেখিয়ে ঈদের ছুটিতে শেয়ারবাজার
১৩ জুন ২০২৪
সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে শেয়ারবাজারে
১২ জুন ২০২৪
তিন শতাধিক কোম্পানির দরপতনেও বেড়েছে লেনদেন
১১ জুন ২০২৪
দেড় ঘণ্টায় প্রধান সূচক কমলো ৭২ পয়েন্ট
১০ জুন ২০২৪
লোকসানে ১১ খাতের বিনিয়োগকারীরা
০৮ জুন ২০২৪
সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ৩৮১ কোটি টাকার লেনদেন
০৫ জুন ২০২৪