ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে ইভ্যালির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে সরকার


নিউজ ডেস্ক
156

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২১
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে ইভ্যালির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে সরকার



আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি কিভাবে তার গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ করবে, তার ব্যাখ্যা তলব করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে কোম্পানি অবসায়ন করতে লিকুইডেটর কিংবা কোম্পানির যাবতীয় সম্পদ জব্দ করতে আদালতে মামলা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার (১৮ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, 'ইভ্যালি কিভাবে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ করতে তার ব্যাখ্যা চেয়ে সোমবারই চিঠি পাঠানো হবে।'

'ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে কোম্পানি আইন অনুযায়ী আদালতের মাধ্যমে লিকুইডেটর নিয়োগ দিয়ে ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা মেটানো কিংবা ইভ্যালির সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজেও মামলা করতে পারে'- যোগ করেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা  বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দিতে ইভ্যালিকে ১০ দিন সময় দেওয়া হতে পারে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, ইভ্যালির পাশাপাশি ধামাকা শপিং, আলিশা মার্ট, ই-অরেঞ্জসহ এ ধরণের সব কোম্পানির কাছেও পর্যায়ক্রমে ব্যাখ্যা তলব করা হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর বিজনেস মডেল পর্যালোচনা করে ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে না হলে তাদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইভ্যালিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও কোম্পানি আইনে এ ধরণের বিধান না থাকায় লিকুইডিটর নিয়োগ বা সম্পদ জব্দের পথে হাঁটতে হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। এক্ষেত্রে আইনী পরামর্শ নিতে কোম্পানি আইন এক্সপার্ট ব্যরিষ্টার তানজীব উল ইসলামের মতামত নেয় মন্ত্রণালয়।

সভা শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ইভ্যালির ব্যাংক একাউন্টে যে অর্থ রয়েছে কিংবা তাদের যে চলতি সম্পদ রয়েছে তা বিক্রি করে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ করতে হলে তা আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে।

ইভ্যালি কোন গ্রাহক বা মার্চেন্ট এর দায় পরিশোধ না করলে তারা দেশের প্রচলিত আইনে সংশ্লিষ্ট আদালতে কিংবা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলা করতে পারেন।

'দেশের প্রচলিত আইনের মধ্যেই মামলা করে আদালতের মাধ্যমেই গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনার বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। ইভ্যালির ব্যাংক একাউন্টে যে টাকা রয়েছে, তাও আদালতের রায় ছাড়া গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার সুযোগ সরকারের নেই।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইভ্যালির ৬৫ কোটি টাকার চলতি সম্পদ রয়েছে। এর বাইরে কোম্পানিটির বা উদ্যোক্তাদের আরও কোন সম্পদ আছে কি-না, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান সচিব।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতারণার অভিযোগে যুবক ও ডেসটিনির বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে। ইভ্যালিসহ কোন ই-কমার্স কোম্পানি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, গ্রাহকের টাকা অগ্রিম নিয়ে ব্যবসায় খাটানো কিংবা নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুরনো গ্রাহকদের পণ্য দেওয়া কিংবা দায় মেটানো যাবে না। ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকায় এমন বিধান যুক্ত করবো আমরা। দীর্ঘমেয়াদে ই-কমার্সখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন করা হবে।

গত ৪ জুলাই জারি করা ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা যেসব কোম্পানি মানছে না, তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা কোম্পানিগুলোর বিজনেস মডেল সম্পর্কেও জানতে চাব। কোন কোম্পানির বিজনেস মডেল দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ই-কমার্সের ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ই-ক্যাব ও কোম্পানিগুলোর সমন্বয়ে একটি সেন্ট্রাল কমপ্লেইন সেন্টার স্থাপন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ফেসবুকে ব্যবসারতসহ দেশের সকল ই-কমার্সকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিতে হবে জানিয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্রতিটি কোম্পানির পৃথক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) থাকবে। যারা নিবন্ধন নেবে না, বিটিআরসির মাধ্যমে তাদের সাইট বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এজন্য সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। দুদক কার্যক্রম শুরু করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু জননিরাপত্তা বিভাগ কোন ব্যবস্থা নিয়েছে- তা এখনও আমাদের জানা নেই।

সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ইভ্যালি নিয়ে উভয় সংকটে সরকার। কোম্পানিটিকে বন্ধ করলেও মোহাম্মদ রাসেল দম্পত্তির লাভ হবে, আবার চলতে দিলেও তাদের লাভ হবে। বৈঠকে ইভ্যালির অনলাইন সাইট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

সভা শেষে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল  বলেন, কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে বিজনেস মডেল জমা দেবে, তা পর্যালোচনায় ই-ক্যাবও সম্পৃক্ত থাকবে।

তিনি বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইভ্যালিসহ ছয়টি কোম্পানির সদস্যপদ কেন স্থগিত করা হবে না, তাদের বিজনেস মডেল কি ইত্যাদি বিষয়ে শোকজ করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও ১০টি কোম্পানিকে শোকজ লেটার পাঠানো হবে।


আরও পড়ুন:

বিষয়: