ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

খেলাপিদের ঋণ আদায়ে জোর দেওয়ার নির্দেশ


নিউজ ডেস্ক
191

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০২১
খেলাপিদের ঋণ আদায়ে জোর দেওয়ার নির্দেশ



দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনাভাইরাসের চলমান প্রভাব মোকাবিলা করে ব্যাংক খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এ লক্ষ্যে এখন থেকে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করার জন্য ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। একই সঙ্গে তিনি ব্যাংকগুলোর নিয়মিত ঋণের কিস্তির মেয়াদ শেষ হলে তা আদায় করার নির্দেশ দেন। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম থেকে যেসব ঋণের বা কিস্তির মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলো এখন থেকে আদায় করতে হবে। বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে অনলাইনে অনুষ্ঠিত একসভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা অংশ নেন। নতুন বছর শুরু হওয়ার পর এটিই প্রথম ব্যাংকার্স সভা। বৈঠকে গভর্নর ফজলে কবির অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ব্যাংকগুলোর এমডিদের জানিয়ে দেন-করোনার কারণে ঋণ আদায় ও খেলাপি ঋণে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এখন থেকে সব ধরনের ঋণ নিয়মিত আদায় করতে হবে। জোর দিতে হবে খেলাপি ঋণ আদায়ে। এভাবে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। অবলোপন করে নয়। আর নতুন করে যাতে কোনো ঋণ খেলাপি না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। বৈঠক শুরুর পর ব্যাংকের এমডিরা বলেন, করোনার প্রভাবে গত বছর ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ আদায় করতে পারেনি। ফলে ঋণ আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরেও অনেকে আশা করছেন ঋণের কিস্তি পরিশোধের স্থগিতের মেয়াদ বাড়তে পারে। এ কারণে কিস্তির মেয়াদ শেষ হলেও অনেকে ঋণ শোধ করছেন না। তারা আরও বলেন, খেলাপি ঋণে আর কোনো ছাড় দেওয়া হোক, তারা সেটি চান না। এখন থেকে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করলে তা প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়নের ধীরগতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর অনীহার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ প্যাকেজ বাস্তবায়নের সময়সীমা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থাপন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করতে ২১টি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এতে মোট অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯টি প্যাকেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো হলো-বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার টাকা, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এপ্রিল ও মে মাসের সুদ ভর্তুকি বাবদ ২ হাজার কোটি টাকা, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি খাতে প্রিশিপমেন্ট ক্রেডিট ৫ হাজার কোটি টাকা, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, ক্ষুদ্র কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং এসএমই খাতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ২ হাজার কোটি টাকা। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ চলমান থাকবে, সেগুলো থেকে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে। ঋণ বিতরণে কোনো ধরনের শৈথিল্য যাতে না করা হয়, সেদিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর নির্বাহীরা বলেন, প্রণোদনার শর্ত বাস্তবায়ন করলে ঋণ বিতরণে কোনো দেরি করা হচ্ছে না। তবে অতি ক্ষুদ্র শিল্পগুলো ঋণের শর্ত পালন করতে পারছে না। এছাড়া তারা ব্যাংকে আসতেও আগ্রহী নয়। এ কারণে এ খাতে ঋণ বিতরণ কম। এরপরও শাখাগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে ঋণ নিতে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমদানি বাবদ স্থানীয় ও বৈদেশিক যেসব এলসি খোলা হচ্ছে, সেগুলোর বিল নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে না। এতে ব্যাংকগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও অভিযোগ আসছে। এতে বিশেষ করে বৈদেশিক দেনা শোধ না করায় বিদেশে বাংলাদেশের দুর্নাম হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের এমডিদের বকেয়া আমদানির বিল দ্রুত পরিশোধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কোনো ব্যাংক যৌক্তিক কারণ ছাড়া আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে টাকা কেটে বিল পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের এমডিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিছু নিয়ে ব্যাংকগুলোর তীব্র আপত্তি আছে-এ কারণে এগুলো পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। তারা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার কথা বলেন।

আরও পড়ুন:

বিষয়: