ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

কৃচ্ছ্র সাধনে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে


নিউজ ডেস্ক
200

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারীফেব্রুয়ারি ২০২০
কৃচ্ছ্র সাধনে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে



প্রতি অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে সরকার সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবেলায় এবার সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে একটি পুরো নীতিমালা তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালাজুড়ে কৃচ্ছ্র সাধনে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। যানবাহন কেনা স্থগিত, ভ্রমণ ব্যয় কাটার মতো পুরনো কঠোরতার পাশাপাশি নীতিমালায় এডিপির পুরো অর্থ ব্যবহারে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জিওবি খাতের ২৫ শতাংশ অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি ধীরগতির প্রকল্পের বরাদ্দ কেটে দ্রুতগতির গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকার কৃচ্ছ সাধনে এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের সময় মন্ত্রণালয়গুলো অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ দাবি করে, প্রকল্প যুক্ত করে। ফলে সরকারের ব্যয়নীতিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। করোনার কারণে এসব ঝামেলা যাতে পোহাতে না হয় সে জন্য অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা নীতিমালা করেছি। আর এডিপি বাস্তবায়নে ৭৫ শতাংশ অর্থ রাখা হচ্ছে। এতে কৃচ্ছ সাধনের পাশাপাশি ব্যয়নীতি ঠিক রাখা সম্ভব হবে।’ এ নিয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ বেড়েছে। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি কমেছে। সরকার করোনার সময়ে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়েছে। রাজস্ব টার্গেট ছিল অবাস্তব। ফলে করোনার সময়ে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি বাড়বে। তাই সরকার এবার অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব নীতি অবলম্বন করছে। তবে আমাদের এডিপি ৭৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হয় না। তাই এডিপির অর্থ ব্যবহারে যে নীতি নেওয়া হয়েছে তা সঠিক। তাতে অর্থ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না বলেই আমার মনে হয়।’ সূত্র মতে, গত অর্থবছর রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর ৮৪.৮৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে না পারলে রাজস্ব আয় ঘাটতি গত অর্থবছর থেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই বাস্তবতায় অর্থ মন্ত্রণালয় কৃচ্ছ সাধনের নীতি জোরদার করতে সংশোধিত বাজেট বেছে নিয়েছে। এ জন্য পৃথক নীতিমালায় বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সংকুলানযোগ্য হতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে তা কোনোভাবেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না। নীতিমালায় পুরনো কৃচ্ছ সাধননীতির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সব ধরনের নতুন/প্রতিস্থাপক হিসেবে যানবাহন কেনা আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তাই এই খাতে কোনো বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে কোনোভাবেই স্থানান্তর করা যাবে না। সরকারি ভ্রমণের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ স্থগিত থাকবে। এই খাতের অব্যয়িত অর্থ অন্য খাতে কোনোভাবেই স্থানান্তর করা যাবে না। নীতিমালায় পরিচালন ব্যয়ের সংশোধিত প্রাক্কলন পদ্ধতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মূল বাজেটে সংস্থান ছিল না এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। চলতি অর্থবছরে অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা আরএডিপি প্রণয়নের ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় মন্ত্রণালয়/বিভাগের মোট এডিপি বরাদ্দের জিওবি অংশের (নতুন প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত থোক ব্যতীত) ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। বাকি ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত রাখতে হবে। ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় কমিয়ে সমন্বয় করতে হবে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। অর্থ বাঁচাতে ধীরগতির প্রকল্পের অর্থ কেটে দ্রুত বাস্তবায়ন গতিসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পসংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ঠিক করে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। আরএডিপির মূল অংশে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না।

আরও পড়ুন:

বিষয়: