ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

বেশি মুনাফার লোভে যেখানে বিনিয়োগ করবেন না


নিউজ ডেস্ক
184

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২০
বেশি মুনাফার লোভে যেখানে বিনিয়োগ করবেন না



বেশি মুনাফার লোভে অনেকেই বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির প্রতিষ্ঠান, অনুমোদনহীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমবায় সমিতিতে বিনিয়োগ করে বসেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কষ্টের টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘোরেন। একসময় তা আর না পেয়ে আশাও ছেড়ে দেন। তাই বিনিয়োগ করার আগে ভাবুন, ভালোভাবে খোঁজখবর নিন। এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বহু মানুষ টাকা ফেরত পাননি। তার মধ্যে প্রকৃষ্ট উদাহরণ ডেসটিনি। বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসার নাম করে এক যুগ ধরে মানুষের কাছ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল ডেসটিনি। ২০১২ সালে ধরা পড়ার পর কেটে যায় আরও আট বছর। অথচ এত বছরেও গ্রাহকদের কেউ কোনো টাকা ফেরত পাননি। এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসার বিপজ্জনক দিক নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশই সতর্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ফেডারেট ট্রেড কমিশন (এফটিসি) জনসাধারণকে এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার জন্য ওয়েবসাইটে একটি পৃষ্ঠাই বরাদ্দ রেখেছে। এতে বলা রয়েছে, ‘এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসার অর্থ আসবে নতুন পরিবেশকের কাছ থেকে, যার পরিণতি—অসংখ্য শূন্য হাত। যতই কোম্পানিগুলো বলুক না কেন শেষের দিকের ব্যক্তিরাও লাভবান হবেন, কিন্তু আমরা অসংখ্য মানুষকে পথে বসানোর ঝুঁকি মেনে নিতে পারি না।’
ডেসটিনির মতো এমএলএম কোম্পানি না হলেও সেই কায়দায় অনেককে পথে বসিয়েছে যুবক। যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের (রেজসকো) কার্যালয় থেকে বিদ্যমান ১৮৬০ সালের সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় ১৯৯৬ সালে নিবন্ধন নেয় যুবক। এরপর আইনের ফাঁক গলিয়ে জনগণের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে। ২০০৫ সালে যুবকের প্রতারণামূলক কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেরিয়ে আসে যুবকের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংসহ নানা প্রতারণার চিত্র। তখনই এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তদন্ত কমিশন গঠন করে। ফরাসউদ্দিন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১১ সালের ৫ মে করা হয় যুবক কমিশন। ওই কমিশন যুবকের ৯১টি জমি, ১৮টি বাড়ি ও ১৮টি কোম্পানি খুঁজে পায়। ৩ লাখ ৩ হাজার ৭০০ গ্রাহকের কাছ থেকে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা যুবকের কর্তাব্যক্তিরা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রতিবেদন দেয় কমিশন।
এত কিছুর পরও এমএলএম কোম্পানির দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এমএলএম কোম্পানি ব্যবসা করে যাচ্ছে। মানুষজনও বিনিয়োগ করছেন। অথচ এমএলএম কোম্পানি আইনের অধীনে বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠানেরই এমএলএম ব্যবসা করার বৈধ লাইসেন্স নেই। তাই কোনো কোম্পানি যদি গ্রাহকের অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে আইনিভাবে মোকাবিলাও সহজ হবে না। তার চেয়ে সহজ এমএলএম কোম্পানি থেকে দূরে থাকুন।
দেশে অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫। অনুমোদন থাকলেও প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তারা গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। গ্রাহকেরা প্রতিদিনই সেখানে ধরনা দিচ্ছেন।
এমএলএমের বাইরে অনুমোদনহীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমবায় সমিতি অতি মুনাফার লোভ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। বহু মানুষ সেখানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগও করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সেই টাকা ফেরত নিতে পারছেন না গ্রাহকেরা। তাই অল্প বা বেশি, যে অঙ্কের টাকাই হোক না কেন, অনুমোদনহীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমবায় সমিতিতে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। দেশে অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫। অনুমোদন থাকলেও প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তারা গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। গ্রাহকেরা প্রতিদিনই সেখানে ধরনা দিচ্ছেন। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। তাই বেশি মুনাফার লোভে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা মানে দুর্ভোগ ডেকে আনা। তাই খোঁজখবর নিয়ে বিনিয়োগ করুন।

আরও পড়ুন:

বিষয়: