ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

আমান ফিডের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত বিএসইসির


নিউজ ডেস্ক
127

প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারী ২০২০
আমান ফিডের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত বিএসইসির



স্টাফ রিপোর্টার : আমান ফিড লিমিটেডের বিরুদ্ধে হিসাবকারসাজির মাধ্যমে বাড়তি মুনাফা দেখিয়ে উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিওতে শেয়ার বিক্রির অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিএসইসি। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই এই কমিটি গঠন করা হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির বর্তমান কমিশন বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে নানা অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় আমান ফিডের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। জানা গেছে, বিএসইসি আমান ফিডের ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখবে। কোম্পানিটি কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে কি-না এবং আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় আন্তর্জাতিক হিসাব মান (International Accounting Standards-IAS) এবং (International Financial Reporting Standards-IFRS) অনুসরণ করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে। আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য এবং পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়ে খেলাপি নাম কাটিয়ে আইপিওতে আসার সুযোগ নিয়েছে কি-না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে বিএসইসি। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবি ব্যাংক লিমিটেডের আড়াইশ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করা এবং ঋণ আদায়ে কোম্পানির সম্পদ নিলামে বিক্রির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ, ২০১৫ সালে আইপিওতে ২৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৬ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান ফিড। আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। অনেক লাভজনক দেখিয়ে বাজারে আসা কোম্পানিটি বছরের পর বছর ধরে এবি ব্যাংকের পাওনা ঋণের অর্থ পরিশোধ করছে না। বাধ্য হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থঋণ আদালতের আওতায় আমান ফিডের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। গত ২ সেপ্টেম্বর নিলামে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে কোম্পানিটি নিলামের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। তবে আদালত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এবি ব্যাংককে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তসাপেক্ষে এই স্থগিতাদেশ দেয়। উচ্চ প্রিমিয়ামে বাজারে আসা একটি কোম্পানির ঋণ খেলাপের দায়ে নিলামে সম্পদ বিক্রি হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা দেশের পুঁজিবাজারে আর ঘটেনি। এই ঘটনায় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরেক দফা নষ্ট হয়। অন্যদিকে কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা ও পরিচালকদের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে বাজারে এই কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। গত মাসে বেশ কয়েকদিন কোম্পানিটির শেয়ার মাঝেমধ্যেই ক্রেতা-শূন্য হয়ে পড়তে দেখা যায়। কারসাজির মাধ্যমে উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রিতেই থেমে থাকেনি আমান ফিডের পরিচালকদের অসাধুতা। আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থ তারা নয়-ছয় করেছে। আইপিওর প্রসপেক্টাসে ঘোষিত খাতে ওই অর্থ ব্যবহার না করে অন্য খাতে ব্যয় করেছে। কিন্তু এই তথ্য আড়াল করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে মিথ্যা প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়ে গেছে তারা। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৮ জানুয়ারি বিএসইসি কোম্পানিটির চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক ব্যতিত) ২৫ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকা জরিমানা করে। যাদের জরিমানা করা হয় তারা হচ্ছেন- আমান ফিড লিমিটেডের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম এবং তরিকুল ইসলাম। এদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে উচ্চ প্রিমিয়ামে দুটি কোম্পানির শেয়ার বিক্রির পর অসাধু ওই উদ্যোক্তারা তাদের আমান গ্রুপের লোকসানি কোম্পানি আমান সিমেন্টকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেছে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা শুধু আমান ফিড নয়, একই উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন তালিকাভুক্ত অপর কোম্পানি আমান কটন ফাইবার্সের আর্থিক প্রতিবেদনও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন।

আরও পড়ুন:

বিষয়: