ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
০৬ জুন ২০২৪

প্রিয় সায়মা, ধর্ষকের দেশে তুই মরেই বেঁচে গেলি


নিউজ ডেস্ক
114

প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০১৯
প্রিয় সায়মা, ধর্ষকের দেশে তুই মরেই বেঁচে গেলি



আলী আজগর  সুজন: টাইটেল দেখে অবাক হচ্ছেন? আমি কেমন ভাই! বোন মরলো কদিন হলো, এখনি একথা! হ্যাঁ,আজকাল আর খারাপ লাগে না বোনটার জন্য। নিউজ পরতে পারি না, অনলাইনে যাওয়া দু:ষ্কর, শিশু ধর্ষণের খররের অত্যাচারে। বাংলার জমি আজ ধর্ষক হায়েনারা দখলে নিয়েছে! বাংলার আকাশে কান পেতে শুনেছো কখনো, কি শুনা যায়?

সেখানে কত ভাই, কত বাবা, কত বোন, কত মায়ের অসহায় চিৎকার। কত ফুলের মত শিশুর কাঁন্না, রক্ত মাখা মুখের কাঁন্না! একটু মনের কানটা দিয়ে শুনে দেখো কচি বোনেরা কেমন অসহায় কাঁন্না কাঁদছে। শুধু মাগো বাবাগো বলে না; না জানি ভাইয়া ভাইয়া বলেও কাঁদছে। কিন্তু সে জানে না তার সাথে কি হচ্চে। তাকে শিকার বানিয়ে খুবলে খাচ্ছে এক একটা জানোয়ার; না সে জানোয়ারের চেয়েও নোংরা কোনো কীট।

নিশ্চয়ই বুজেছেন আমি কি নিয়ে লিখছি। হ্যাঁ, আমি আমার দেশে বিরতিহীন ঘটে যাওয়া শিশু ধর্ষণের কথা বলছি। প্রথম আলোর তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণ হয়েছে হাজারেরও অধিক। যার মধ্যে শিশু ধর্ষণের হারটাই বেশি। ২০১৯ এ এসো তো আরো এগিয়ে গেছে শিশুধর্ষক কুকুরগুলো। ২০১৯ এ শিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে ১৬১%। সর্বশেষ ৮ দিনের সংখ্যাটা ৫০ ছুঁইছুঁই। আহা দেশ, আহারে দেশ! আফসোস তোর বুকে এত ধর্ষকের বসবাস। দেশ হিসেবে এসব প্রতিবেদন সত্যিই লজ্জাষ্কর।

একটু ভাবুন তো ২-৩ বছরের একটি শিশু, তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মত চিন্তা কি মানুষ করতে পারে? আসলেই কি তাকে দেখে কোন লালসা তৈরি হয়? নাকি এসব করে মানুষের খোলষে আবদ্ধ চতুষ্পদী কোন জানোয়ার প্রজাতির ঘৃনিত জীব। আচ্ছা এ জানোয়ার যখন এটুকু বাচ্চার উপওে চড়ে বসে তার কনে কি ঐ বাচ্চার নিষ্পাপ চাহনী নিষ্পাপ কাঁন্না তাকে ছোয় না, নাকি এ জানোয়র অন্ধ বধির। এ কি বোঝে না, এ ফুটফুটে কোমল ফুলের মত শিশু, অশুরের দ্বারা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়? এ কি বোঝে না এ নরপশুর কারনে ঐ শিশুর আত্বীয় স্বজনের কলিজা গুলোতে অনবরত তীর বিদতে থাকবে? আসলে ও বুজবে কি করে সেতো ধর্ষক। ধর্ষকের তো মন নেই, বোঝার মত বোধ ও নেই। ধর্ষকের তো ধর্ম নেই, জাত নেই,  ভালবাসা নেই, মমতা নেই, আবেগও নেই। ধর্ষক শুধুই ধর্ষক। ধর্ষকের পরিচয় একটাই সে ধর্ষক।

এবার আসি ধর্ষকের বিচার নিয়ে। ধর্ষক ধর্ষণ করে জনগন শুধুই দর্শক হয়ে দেখে। আইনের চোরাগলি দিয়েই তারা আবার ফিরেও আসে। বড়জোর গ্রেফতার ক’দিন মিডিয়ার তোড়পাড়। অত:পর বিচরের নামে শুনানি আর শুনানি ও তদন্তের মহড়া।

এদিকে ধর্ষিতার পরিবারে বয়ে চলে এক নিরব সুনামি যা থেকে যায় অন্তরালে। বছর কয়েক পরে বড়জোর কারো বছর কয়েক জেল বাকিদের মুক্তি। আবার শুরু ধর্ষণ, আবার আমাদের দর্শন। আমি এসব দেখতে দেখতে অভস্ত ছিলাম। কিন্তু আজ কয়টি কথা না লিখে পারলাম না। কারন এখন মিডিয়া আলোচিত ধর্ষীতা শিশু সায়মাকে নিয়ে। যাকে এক নরপিচাশ ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে। যার বয়স মাত্র তিন। আমার বোন সায়মা তার বয়স ও তিন যে কিনা হঠাৎ করে কদিন আগে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেল।

আমাকে কিছু না বলেই না ফেরার দেশে চলে গেল। আমি তার বিয়োগ সহজ ভাবে নিতে পারি নাই। কেননা আমি তাকে প্রচন্ড ভালবাসতাম। সব থেকে বেশিই ভালবাসতাম। আজ মনে হয়েছে সে মরে গিয়ে ভালই হয়েছে! এ দেশ সায়েমাদের জন্য উপযুক্ত চরনভূমি নয়। এখানে তারা মোটেই নিরাপদ নয়। আজকের ধর্ষীতা সায়মা আর আমার বোন সায়মার বয়স একই রকম আবার দেখতেও অনেকটা একি রকম ছিল। আজকের সায়মার যায়গায় যখন নিজের বোন সায়মাকে রাখলাম, তখন আর কোন ভাবেই মেনে নিতে পারি না।

আজকের সায়মার জন্য আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছি। না জানি সায়মার বাবা মা কত কষ্ট পাচ্ছে। আর তাই নিজের কাছে আজ বার বার মনে হচ্ছে সায়মা তুই অকালে মরে গিয়ে তুইও বাচলি, আমাদেরকেও বাঁচালি। এ দেশে তোদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

ভিক্টিম সায়মার জন্য বুক ফাটা হাঁহাঁকার, চিৎকার করে বলি- ভাল থাকিস ওপারে প্রিয় বেন সায়মারা।

সবশেষে সরকার বাহাদুরের কাছে এক অসহায় ভাইয়ের আকুল মিনতি। বিচার চাই না! শুধু ধর্ষকদের জাতীয় ধর্ষকের স্বীকৃতি চাই। তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে পেশা হিসেবে ধর্ষক অন্তর্ভুক্তি চাই। তাতে যদি ধর্ষকে চিনে নিজেদের চেষ্টায় বোনদের বাঁচাতে পারি।


আরও পড়ুন:

বিষয়: