অ্যাক্টিভ ফাইন ও এনবিআর জটিলতা, মুনাফা কমার আশঙ্কা

ডেক্স রিপোর্ট: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) থেকে এসআরও জারি না হওয়ায় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের কাছে অনাদায়ী আয়কর, এর সুদ ও জরিমানা বাবদ ৫৫ কোটি টাকার বেশি দাবি করে আসছিলেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। এ কারণে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কোম্পানিটির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের স্বীকৃত দায় পরিশোধের শর্তে তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেয় এনবিআর। এদিকে এনবিআরকে অর্থ পরিশোধ করতে হলে কোম্পানিটির মুনাফা প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন শেয়ারহোল্ডাররা। খাতসংশ্লিষ্টদের দাবির মুখে আমদানি বিকল্প পণ্যের নতুন শিল্প হিসেবে ওষুধের কাঁচামাল (এপিআই) উৎপাদকদের কর ও মূসকমুক্ত শিল্প খাত ঘোষণা দিয়ে গত বছর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খাতসংশ্লিষ্টদের আবেদন ও সরকারি প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতেই দুই বছর ধরে হিসাব প্রতিবেদন প্রস্তুত করে কর পরিশোধ করে আসছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এপিআই প্রস্তুতকারক অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো এসআরও জারি না হওয়ায় কোম্পানিটির কাছে আয়কর, সুদ ও জরিমানা বাবদ ৫৫ কোটি টাকার বেশি দাবি করে করে এনবিআর। ৬ জানুয়ারি ঢাকার কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার অফিস থেকে জারি করা এক পত্রের মাধ্যমে কোম্পানিটির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে এনবিআর। এরপর ৯ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর কমিশনারকে চিঠি দিয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলে, ২০১৮ সালের মে মাসে প্রকাশিত ২৬.০০.০০০০.১০০.৪২.০০৮.১৭-৫৪ নম্বর গেজেটে এপিআই শিল্পের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের কোম্পানিকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর ও মূসকমুক্ত ঘোষণা করে সরকার। এ বিষয়ে শিগগিরই এসআরও প্রকাশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় চিঠিতে। চিঠিতে কোম্পানিটি আরো বলে, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যাল দেশের ওষুধ শিল্পের একমাত্র এপিআই প্রস্তুতকারক কোম্পানি। কোম্পানিটির উৎপাদিত বিভিন্ন এপিআই থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রস্তুত করা হচ্ছে, যেগুলো আগে আমদানি করা হতো। পাশাপাশি আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৬-১৭ করবর্ষের স্বীকৃত দায় পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোম্পানিটি তাদের সব ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার আবেদন করে। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ২ কোটি টাকা পরিশোধ করায় দ্রুতই তাদের সব ব্যাংক হিসাব খুলে দেয় এনবিআর। জানতে চাইলে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সাইফুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এনবিআরকে আরো কত টাকা পরিশোধ করতে হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার এপিআই শিল্প নিয়ে যে নীতি ঘোষণা করেছিল, তা কার্যকর হলে আমরা সরকারের কোষাগারে এরই মধ্যে যে অর্থ পরিশোধ করেছি, সেখান থেকে উল্টো ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু এসআরও জারি না হওয়ায় আমাদের কাছে আরো বেশি অর্থ দাবি করছে এনবিআর। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধে সম্মত হয়ে ব্যাংক হিসাবগুলো সচল করতে বাধ্য হয়েছি। [caption id="attachment_8490" align="alignnone" width="623"] ২০১৬ সাল থেকে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের বর্তমান শেয়ার হোর্ডিং প্যাটার্ন[/caption] আমরা এখানো আশা করছি, এনবিআর বিষয়টি অনুধাবন করে এসআরও জারি করবে এবং আমাদের ওপর থেকে দাবি প্রত্যাহার করে নেবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারেরও সহযোগিতা চাই। তা না হলে রাজস্ব কর্মকর্তারা যেটি চাইবেন, আমাদের তা-ই দিতে হবে। এমনটি হলে একদিকে এপিআই শিল্প গড়ে তুলতে কোম্পানির উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে শেয়ারহোল্ডাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদিকে এনবিআরকে আরো অর্থ পরিশোধ করতে হলে ২০১৬-১৭ করবর্ষের বিপরীতে আরো ১৫-২০ কোটি টাকা পরিশোধের চাপ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কোম্পানিটির শেয়ারধারী একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষকরা। তেমনটি হলে কোম্পানির মুনাফা কমে যাবে। এ সমস্যার বিষয়ে কোম্পানির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকও শেয়ারহোল্ডারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। [caption id="attachment_8489" align="alignnone" width="871"] অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের বর্তমান শেয়ার হোর্ডিং প্যাটার্ন[/caption] ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত চার মাসে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস শেয়ারের দর ৪৫ থেকে ২৮ টাকার ঘরে নেমে এসেছে। সুত্র বণিক বার্তা