জেড ক্যাটাগরির ২৩ কোম্পানি পরিদর্শনে ডিএসইকে নির্দেশ
Reporter01
112
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ারবাজারের দুর্বল ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত ‘জেড’ ক্যাটাগরির ২৩ কোম্পানি পরিদর্শনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ, এজিএম করতে ব্যর্থ ও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা দুর্বল ক্যাটাগরির এসব কোম্পানির সামগ্রিক কার্যক্রম যাচাই এবং তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে পরিদর্শনের জন্য নাম উল্লেখ করা কোম্পানিগুলো হলো- অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, আরামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং, বিআইএফসি, জিবিবি পাওয়ার, ইনটেক লিমিটেড, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ এবং মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড। এসব কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে বিশেষ অনুসন্ধানের জন্য চিঠিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এছাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানি, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, পিপলস লিজিং, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রিং শাইন টেক্সটাইল, আরএসআরএম, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, সাফকো স্পিনিংস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ইয়াকিন পলিমার লিমিটেডের উৎপাদন, এজিএম এবং লভ্যাংশ প্রদানের বিষয় নিয়েও পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে ঋণে জর্জরিত উৎপাদহীন কোম্পানিগুলো রাজত্ব করে চলেছে। তাদের কোন কার্যক্রম চলমান না থাকলে প্রতিনিয়ত কারসাজির মাধ্যমে হু হু করে বাড়ছে শেয়ারদর। ফলে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা তাদের ফাঁদে পা দিয়ে লোকসানে ভুগছেন। এতে শেয়ারবাজার থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছেন স্বচ্ছ বিনিয়োগকারীরা।
এ ব্যাপারে বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জেড ক্যাটাগরিতে বর্তমানে প্রায় দুই ডজন কোম্পানি লেনদেন করছে, যারা দীর্ঘসময় বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ প্রদান করেনি। পাশাপাশি বিএসইসির নিয়মনীতি পরিপালনেও ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন এসব কোম্পানির সামগ্রিক অবস্থান জানতে ইতোমধ্যে পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের পরিদর্শন প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
পুঁজিবাজারে নানান অনিয়মের কারণে সম্প্রতি ২৮ কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করে ডিএসই। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ৪ মার্চ বিএসইসির দুই দফা নির্দেশনায় এসব কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, তিনটি শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতার কারণে ২৮ কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। শর্তগুলো হলো- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থ, কোম্পানির উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম ন্যূনতম ছয় মাসের জন্য বন্ধ এবং পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এসব কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে দুর্বল কোম্পানির তালিকায় পাঠানো হলেও এসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি থেমে নেই। বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা অ্যাপোলো ইস্পাত ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৩ সালে পুঁজিবাজার থেকে ২২০ টাকা উত্তোলন করে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দুই দফায় মাত্র ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। সবশেষ ২০১৬ সালে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। দীর্ঘসময় লভ্যাংশ বিতরণ এবং কোম্পানি পরিচালনে ব্যর্থ হলেও গত সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিলো ৫ টাকা।
একই ঘটনা দেখা গেছে সোয়েটার রপ্তানিকারক কোম্পানি নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটারের শেয়ারে। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ২০১৭ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৪৩ কোটি টাকা তুলে নূরানী ডাইং। কিন্তু আইপিওর মাধ্যমে টাকা তোলা ছিলো কোম্পানিটির এক বড় প্রতারণা। ডিএসইর এক তদন্তে জানা যায়, শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত টাকার ৪১ কোটি টাকাই কোম্পানির উদ্যোক্তারা আত্মসাৎ করেছেন। পরবর্তীতে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমনকি তালিকাভুক্তির পর এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিয়েছিলো মাত্র একবার। কারসাজিতে জড়িত এই নূরানী ডাইংয়ের গত সোমবার শেয়ারদর ছিলো ৪ টাকা ৯০ পয়সা।
জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর হওয়ার পরেও শেয়ারদর বাড়ছে জুট স্পিনার্সের। গতকাল সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা। দীর্ঘ সময় লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিটির ৩০ জুন, ২০২৩ সমাপ্ত বছর শেষে শেয়ার প্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ৫২২ টাকা ১৯ পয়সায়। তবুও নানান কারসাজিতে জুট স্পিনার্সের শেয়ারদর বাড়ছে।
এদিকে প্রায় পাঁচ বছর পর গত ১০ মার্চ শেয়ারবাজারের লেনদেনে ফিরে আসছে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কোম্পানিটি একসময় প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানিটি বিলুপ্ত বা অবসায়নের উদ্যোগ নেয়। এ কারণে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করা হয় কোম্পানিটির।
২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পিপলস লিজিং ২০১৪ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।