ইন্টারন্যাশনাল লিজিংকে বাঁচাতে পারবেন এনআই খান?
নিউজ ডেস্ক
144
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২১
আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের কারণে সংকটে পড়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক না, তবে ব্যাংকের মতোই কার্যক্রম চালায়। পার্থক্য শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চেক ইস্যু করতে পারে না। আর চলতি আমানতও নিতে পারে না। অন্য সব কার্যক্রম ব্যাংকের মতোই।
তাই পি কে হালদারের নজর পড়েছিল এসব প্রতিষ্ঠানে। নামে-বেনামে দখল করেন চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সঙ্গীরা মিলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করেন, যা আর ফেরত দিচ্ছেন না। এতে চরম সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠান চারটি। এর মধ্যে একটি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)। এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি ছিল। দেশের ভালো কয়েকটি গ্রুপ এই লিজিংটির পরিচালনা পর্ষদে ছিল।
পি কের দখলে যাওয়ার পরই সংকট হয়। আমানতকারীরা টাকা না পেয়ে আদালতে গেলে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াত সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি এক মাসের মাথায় পদ ছেড়ে দেন। জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সক্রিয় না হলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এরপরই সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম (এনআই) খান চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।
এরপর দুদক ঠিকই সক্রিয় হয়েছে। টানা কয়েক দিন লিজিংটির কার্যালয় থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। এরপর কয়েকটি মামলাও করেছে। এতে পি কে হালদারসহ লিজিংটির সাবেক ও বর্তমান পরিচালক এবং কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
এনআই খান যোগ দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি উন্নতির চেষ্টা করে যাবেন। তিনি চেষ্টা করছেন, তবে কতটা সফল, তা বলার সময় এখনো আসেনি। এনআই খানের জন্য চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। তাঁর পরিচয় তিনি সাবেক সচিব। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর। তাই তাঁর কাছে প্রত্যাশাও অনেক বেশি।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ২০১৯ সাল শেষে আমানত ছিল ২ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা ও ঋণ ছিল ৩ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা লোকসান দেয়। এর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ ১১ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল আইএলএফএসএল।
পেশাগত কারণে অনেক আমানতকারীর সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। অনেকে ক্যানসারে আক্রান্ত, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাঁর টাকা ঠিকই আছে, তবে সেই টাকা রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে। ফলে এই টাকা থাকা না–থাকা প্রায় সমান। কপাল ভালো হলে কোনো একদিন টাকা হয়তো ফেরত পাবেন। তবে টাকা সময়মতো না পেলে তো মূল্য ঠিক থাকে না। বুধবারই একজন আমানতকারী জানালেন, ২০১৭ সালে ২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন। এক বছর মেয়াদ শেষ হলেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। ২০২০ সালের জুলাইয়ের পর সুদ পাওয়াটা বন্ধ হয়ে গেছে।তবে এন আই খান যোগ দেওয়ার পর প্রায় ৬০ কোটি ছোট আমানতকারীদের ফেরত দিয়েছেন। অনেক আমানত নবায়ন করা হয়েছে। এককালীন কিছু টাকা আদায় করে ঋণ নিয়মিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এতে ভালো ফলও আসছে। তবে সমস্যা হলো ঋণের টাকার বড় অংশের সুবিধাভোগী পি কে হালদার।শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ২০১৯ সাল শেষে আমানত ছিল ২ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা ও ঋণ ছিল ৩ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা লোকসান দেয়। এর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ ১১ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল আইএলএফএসএল।
গত সপ্তাহে নজরুল ইসলাম খানের কাছে গেলে তিনি কয়েকটি সমস্যার কথা জানালেন। বলেন, লিজিংয়ের সবার নামেই মামলা। কাকে দায়িত্ব দেব, বুঝতে পারছি না। এখন নতুন লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টাকা দিতে চাইছে, সবার হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ফলে চেক জমা হলেও টাকা আসছে না। এই মুহূর্তে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু টাকা দিত, তাহলে ব্যবসা চালু রেখে এসব টাকা আদায়ে জোরদার করা যেত। এসব টাকা একেবারে ভালো গ্রাহক দেখে দেওয়া হতো। তাহলে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াতে পারত।
এর সঙ্গে তিনি একটি ভালো খবরও দিলেন। বললেন, আই বিজনেস হোল্ডিংয়ের ১৮ কোটি টাকা শোধ করেছে। এটা নিঃসন্দেহে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের জন্য ভালো খবর। কারণ, এই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে গিয়ে মামলার হুমকি পেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি আবদুল খালেক খান। এরপরই তিনি পদত্যাগ করেন।
এন আই খানের সঙ্গে দেখা করার পর পি কে হালদারের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফোন করলেন। বলেন, ‘শুনলাম, আমাদের ওখানে গিয়েছিলেন।’ আমি জানিয়ে দিলাম, সবই যেহেতু জেনেছেন, তাই উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
বোঝা গেল ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কথিত পি কে হালদারের ছায়া এখনো সরেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও পি কে হালদারের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। সেটাও পরিপালন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই এন আই খানের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটিকে ঘুরে দাঁড় করানো আসলেই কঠিন।