ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
১১ জুন ২০২৪

প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানির বিক্রি বাড়লেও, মুনাফা কমছে


নিউজ ডেস্ক
270

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানির বিক্রি বাড়লেও, মুনাফা কমছে



দেশে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে দেশে ও বিদেশে। এতে করে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। তবে এসব খাদ্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুতকারী স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, ইফাদ-সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে করে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। তবে এই সময়ে পণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারভেদে বিক্রিও বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসেই সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ৭০০ ডলার থেকে বেড়ে ১১৫০ ডলারে উঠেছে। এ সময়ে প্রায় প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলে দাম প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে ৪ শতাংশ এবং পরিশোধিত চিনিতে ৮.২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় গমের দর বেড়েছে ৭.০৪ শতাংশ।বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বেড়েছে উৎপাদনে। তবে করোনাকালীন সময়ে যখন কিছু পণ্যের ব্যবসা তলানিতে নেমে যায়; তখনও প্রক্রিয়াজাত খাবারের দেশে ও বিদেশে বাজার বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে, বিস্কুট, চিপস, নুডুলস, বেকারি পন্য, চানাচুর, ফ্রোজেন ফুড থেকে শুরু করে স্ন্যাকস জাতীয় নানা খাবার।

এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর  বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম অন্তত ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ার কারণে আমরা এখনো পণ্যের দাম বাড়াইনি। তবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়- তা মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।'আন্তর্জাতিক বাজারের কাচামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলে, তখন বাধ্য হয়েই পণ্যের দামও বাড়াতে হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

করোনাকালীন সময়ে শুধু দেশের বাজারে চাহিদা বেড়েছে তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। যেকারণে রপ্তানিও বেড়েছে। প্রাণ ও ইফাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুধু বিস্কুটেরই চাহিদা বেড়েছে। স্কয়ারও বলছে প্রক্রিয়াজাত খাবার বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটি দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক হিসেবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের শুকনো খাবার রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিলো সাড়ে ১১ কোটি ডলার।প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'করোনার মধ্যে বাজার বাড়লেও আমরা মুনাফায় পিছিয়ে পড়েছি। কারণ, কাঁচামালের দাম বাড়লেও কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। সেজন্য মুনাফা সীমা কমাতে হয়েছে।'

এছাড়া, সরবরাহ চক্র, পরিবহন-সহ বিভিন্ন জায়গায় খরচ কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে বলেও তিনি জানান।সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার মধ্যে যখন বাইরের হালকা খাবারের দোকানগুলো বন্ধ ছিল এবং মানুষ রাস্তার খাবার থেকে মুখ সরিয়ে নেয়; তখনই প্রক্রিয়াজাত খাবারের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই সময় মানসম্পন্ন খাবারের দিকে ভোক্তারা মনোযোগী হয়েছে।

ইফাদ মাল্টিপ্রোডাক্টসের জেনারেল ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) মাহফুজুর রহমান জানান, 'বিস্কুটের বাজারে এক্সপোর্ট গ্রোথ হয়েছে ৩০-৩৫ শতাংশ। কিন্তু, উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে, বিশ্ববাজারে নতুন বাজার ধরার প্রতিযোগীতার কারণে আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারিনি।'সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মোট ৬ হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশে তৈরি বিস্কুটের চাহিদা তৈরি হয়েছে।


আরও পড়ুন: