ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

টাকা পাচারে এগিয়ে


নিউজ ডেস্ক
247

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২০
টাকা পাচারে এগিয়ে



প্রতি বছরই দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা পাচারের তথ্য উদ্ঘাটন হচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপারেও বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটন হয়েছে।
টাকা পাচার বন্ধে দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সিআইডি কাজ করছে। এরপরও দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ থেকে বিভিন্ন পথে টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পণ্য আমদানির এলসি খুলে বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে দেয়ার পরও পণ্য দেশে না এনে, আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে, এলসিতে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে কম পণ্য দেশে এনে, বেশি দামের পণ্যের এলসি খুলে কম দামের পণ্য দেশে এনে টাকা পাচার করা হচ্ছে। রফতানির মধ্যে পণ্যের রফতানি মূল্য দেশে না এনে, মোট রফতানির মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেশে এনে, বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য রফতানি করে, বেশি পণ্য রফতানি করে এলসিতে কম দেখানোর মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্চে। এর বাইরে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আওতায়ও টাকা পাচার হচ্ছে। এছাড়া হুন্ডি, স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকার পাচার হচ্ছে। এর বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়ায় এখন দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। আগে দেশ থেকে টাকা পাচার হতো হুন্ডি ও চোরাচালানের মাধ্যমে। এতে ঝুঁকির মাত্রা বেশি ছিল। ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাচারের কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাচার হচ্ছে বেশি। পাচার করা টাকার একটি বড় অংশই যাচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও এ ঘটনা ধরা পড়েছে। বিশেষ শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানির নামে টাকা পাচার হচ্ছে বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা যায়, আমদানির জন্য শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। কিন্তু কনটেইনারের ভেতরে পাওয়া গেছে বালি ও ইটের গুঁড়া। ফলে ওই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশি ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহক টাকা বিদেশের ব্যাংকে পাঠায়। বিদেশি ব্যাংক থেকে ওইসব অর্থ স্থানান্তর করা হয় রফতানিকারকের ব্যাংক হিসাবে। রফতানিকারক ওই অর্থ আমদানিকারকের হিসাবে স্থানান্তর করে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক, আমদানিকারক ও রফতানিকারক মিলে টাকা পাচার করছে। আর এ কাজে সহায়তা করছে আমদানি তদারককারী সংস্থা কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পণ্য দেশে না আনলেও কাগজপত্রে দেখিয়ে দিচ্ছে পণ্য দেশে এসেছে। একই প্রক্রিয়ায় কম পণ্য দেশে আনার মাধ্যমে বা কম দামি পণ্য দেশে আনার মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। বিদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে গ্রাহক যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করে তার পুরোটা দেশে আনে না। বাকি অর্থ বিদেশি ব্যাংক আমদানিকারকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে দেয়। আমদানিকারক তা রফতানিকারকের বিদেশের কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে টাকা পাচারে সহায়তা করছে দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। কেননা রফতানির মূল্য ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে দেশে আনার কথা। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে দেশে না আনলেই তা পাচার বলে ধরে নিতে হবে। ব্যাংকগুলো এসব এ বিষয়গুলো তদারকি করে না বলে এ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হচ্ছে। এছাড়া নগদ আকারে বা চোরাচালান বা হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে মোটা অংকের অর্থ পাচার হচ্ছে। বিশেষ বন্দর বা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এগুলো পাচার হচ্ছে। আইএলওর এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসীরা প্রতি বছর যে পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠান তার মধ্যে ৪০ শতাংশ আসে ব্যাংকিং চ্যানেলে। বাকি ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ নগদ আকারে এবং অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে। এ হিসাবে নগদ যেসব রেমিটেন্স আসে সেগুলো ব্যাংকিং খাতে জমা হয় না। ডলারের কার্ব মার্কেটের মাধ্যমে আবার বিদেশে চলে যাচ্ছে। হুন্ডিতে যে রেমিটেন্স আসছে সেটি পাচার হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ জিএফআই ২৮ জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য (আমদানি-রফতানি) হয়েছে, এর মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। গত ১০ বছরে দেশ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। জুনে প্রকাশিত সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকা পাচার করার পথগুলো বন্ধ করতে হলে আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া টাকা পাচার বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, নানা পথে টাকা পাচার হচ্ছে। সুশাসনের অভাবে এখন টাকা পাচারের পথ অনেক বেশি খুলে গেছে। আমদানি, রফতানি, হুন্ডি এসব খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রফতানি মূল্য বা আমদানি পণ্য দেশে না এলে পরবর্তী এলসি খোলায় কঠোরতা আরোপ করতে হবে। একই পণ্যের দাম, কি পণ্য আসছে-যাচ্ছে এগুলো তদারকি বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, টাকাকে অলস রাখা যাবে না। বিনিয়োগমুখী করতে হবে। তাহলে পাচার কমে যাবে।

আরও পড়ুন: