এর পরপরই লাল সালু কাপড়ে মুড়িয়ে সেই পরোয়ানা নিয়ে আদালতের কমর্চারীরা রওয়ানা হন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে। মঙ্গলবার, ০৭ এপ্রিল ভোরে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তাকে সেখানেই রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশের সব অফিস-দপ্তরের মত আদালতেও নিয়মিত স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কেবল জরুরি এবং আইনি বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রেই আদালত বসছে।
তারপরও বুধবার মৃত্যু পরোয়ানা জারির জন্য সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, “আদালত ছুটিতে থাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল মাজেদের বিষয়ে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিল না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে পলাতক আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়।
“তাই মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত আবেদন করে। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে আজকের জন্য এ আদালতের ক্ষেত্রে ছুটি বাতিল করা হয়।”
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ওই মৃত্যু পরোয়ানা আসামিকে পড়ে শোনাবে।
তখন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে আসামি বা তার পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। কারা বিধিতে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য ৭ থেকে ২১ দিন সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে বা তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে কারা কর্তৃপক্ষের সামনে দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না বলে জানান কাজল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। এরপর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলা হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এ মামলার রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাই কোর্টের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে পাঁচ আসামি রিভিউ আবেদন করেন।
তা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আবদুল মাজেদ ছাড়াও খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান সে সময় পলাতক ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে মাজেদকে গ্রেপ্তার করার পর আদালতের মাধ্যমে তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এতদিন পলাতক থাকা মাজেদ কী এখন মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন? এর উত্তরে আইনজীবী কাজল বলেন, “সে সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। আপিল করতে বিলম্বের জন্য কোনো যৌক্তিক কারণ মাজেদ দেখাতে পারবেন না। সুতরাং কোনো সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না। আগামী ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে যে কোনো সময় রায় কাযর্কর হবে।”
সূত্র: বিডিনিউজ