রিং শাইনের এমডিকে শুনানীতে ডেকেছে বিএসইসি
নিউজ ডেস্ক
124
প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
স্টাফ রিপোর্টার: রিং শাইন টেক্সটাইলের ব্যাংক হিসাব প্রায় একমাস ধরে অবরুদ্ধ (Freeze)। কোম্পানিটির বিদেশি পরিচালকেরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে বিএসইসির অনুরোধে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিং শাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শুনানীতে ডেকেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ, গত গত ৯ জানুয়ারি এমডিসহ ৩ পরিচালক বিভিন্ন কারণে নিজ দেশ তাইওয়ানে যান। বিষয়টি নিয়ে তখন হঠাৎ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বলাবলি হতে থাকে, তারা আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। এর প্রেক্ষিতে ওই মাসের শেষ সপ্তাহে বিএসইসি এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে আলোচিত কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির ব্যাংকহিসাব অবরুদ্ধ রাখার জন্য বিএসইসির চিঠি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এদিকে গত ২৯ জানুয়ারি রিং শাইনের এমডি বাংলাদেশে ফিরে পরদিন কাজে যোগ দেন। কিন্তু এমডি কাজে যোগদান করার পরও গত একমাসে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়নি।
বিএসইসি তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে আরও সময় লাগবে। বর্তমানে কোম্পানির বিষয়টি বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগে যাচাই-বাচাইয়ের জন্য রয়েছে। এনফোর্সমেন্ট বিভাগের তদন্ত শেষে ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে কোম্পানিকে শুনানির জন্য ডাকা হবে।
এবিষয়ে কোম্পানি কোনো আবেদন করেছে কিনা এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, হিসাব খুলে দেয়ার বিষয়ে আমরা কোনো আবেদন করিনি। এবং এখন পর্যন্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
তবে শুনানির বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বিএসইসি থেকে শুনানির জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করবো। ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার জন্য আমাদের দিক থেকে কোনো কিছুই করা হচ্ছে না।
রিং শাইনের আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ নিয়ে বাজারে নানা ধরনের গুজব রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- কোম্পানিটির বিদেশী পরিচালকেরা আইপিওতে উত্তোলিত ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। তারা আর দেশে ফিরবেন না। এমন খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রিং শাইন নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়।
রিং শাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে আইপিওতে বাংলাদেশীদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশীদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।
ব্যাংক হিসাব অনুযায়ি, রিং শাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ হিসাবে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিওবাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।
আইপিও হিসাবের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক হিসাবে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর হিসাবে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর হিসাবে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর হিসাবে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং শাইনের আইপিও ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।
রিং শাইন টেক্সটাইল বাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এরমধ্যে প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যা দিয়ে ঢাকা ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। আইপিওতে ডিএসইর ফি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয় করা হবে। যা ক্রয়ে সময়সীমা রয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।
আইপিও প্রক্রিয়ায় গত ১২ ডিসেম্বর দেশের বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল রিং শাইন টেক্সটাইল। অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দামের শেয়ারটির দর লেনদেনের দ্বিতীয় দিনে ২১ টাকা ৯০ পয়সায় উঠেছিল। কিন্তু গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ৭ টাকা ৯০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়েছে।
সূত্র: অর্থসূচক