ঢাকা বৃহস্পতিবার
২১ জানুয়ারীজানুয়ারী ২০২৪
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

চুইঝাল চাষ করে যেভাবে সাবলম্বী হয়েছেন সবুজ


নিউজ ডেস্ক
143

প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারী ২০২১
চুইঝাল চাষ করে যেভাবে সাবলম্বী হয়েছেন সবুজ



মাসুদুর রহমান সবুজ লেখাপড়া শিখেছেন; কিন্তু কাজ পাচ্ছিলেন না। শিক্ষিত বেকারের তকমা তার গায়েও লেগে যায়। কিন্তু না শেষেমেশ চাকরি ছেড়ে চুইঝালের ব্যবসায় শুরু করলেন। এতে সফলতা আসার পর উদাহরণ হয়ে আছেন যশোরের মণিরামপুরের সবুজ। মোহাম্মাদ বাবুল আকতার খবর পেয়েছেন। চুইঝাল একরকম মসলা। চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অনেকের জিভেই জল আনে। খানপুরে সবুজের চুইঝাল প্রকল্পে এখন নিয়মিত কাজ করছেন ১৩ জন। তারা সবাই শিক্ষিত বেকার যুবক। সবুজ শুরু করেছিলেন নিজের বাড়ির গাছে, তারপর তা বিস্তৃত করেন গ্রামেরই আরো আরো গাছে। তারপর দিনে দিনে সাতটি গ্রামে গড়ে তুলেছেন চুইঝালপল্লী। এর সদস্য ৫০০ জন। স্বাবলম্বী হয়ে তারপর সবুজরা মনোযোগী হয়েছেন নিরক্ষরদের স্বাক্ষর করে তোলার কাজে।  সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরও আয়োজন করেন তারা। দুর্যোগে এলাকাবাসী তাদের পাশে পায়। সময় কই? সবুজের বাবা আনছার আলীর বয়স ১০৫ বছর। হরিহর নদীর কোলে মুন্সীখানপুর গ্রামে বাড়ি। সবুজের খবর জানতে চাইতেই আনছার আলী বললেন, তার বাড়িতে থাকার সময় কই? সেতো থাকে চুই বনে।’ সবুজের জন্ম ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে। মা-বাবার আট ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার ছোট । বাবাও কৃষিকাজ করতেন। একসময় আনছার আলী একটি নার্সারি গড়ে তুলেছিলেন। তাই কাজটা সবুজের শেখা হয়ে গিয়েছিল। ২০১০ সালে সবুজ ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তারপর সাতক্ষীরায় যান কৃষি বিষয়ে ডিপ্লোমা নিতে। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ হয় ২০১৪ সালে। তারপর খুলনা অ্যাগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটে বিএজিএডে (ব্যাচেলর অব অ্যাগ্রিকালচারাল এডুকেশন) ভর্তি হন। ২০১৮ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। দুঃসময় ফুরাল পড়াশোনা করেছে, তাই সবুজ চাকরিই করবে—সবাই এমনটা ভাবত। সবুজও সমাজের মন জোগাতে চাকরি পেতে উঠেপড়ে লাগেন। কিন্তু জুতার তলা ক্ষয় হলেও চাকরি আর মিলে না। অবশেষে বাড়ি ফিরে কৃষিকাজেই মন দেন। বাড়িতে বেশ কিছু কাঠগাছ (মেহগনি, আকাশমণি ইত্যাদি) ছিল। কিছু বিক্রি করে ছয় হাজার টাকা পান। তা দিয়ে বাড়িতেই শুরু করেন চুই চাষ। তারপর গ্রামের আরো কিছু গাছ ভাড়া নেন। এরপর এলাকার যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে থাকেন আশপাশের গ্রামগুলোতে। এখন সাতটি গ্রামে চার হাজার গাছে আবাদ হচ্ছে চুইঝাল। পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ সবুজের সঙ্গে যুক্ত হয় দিনে দিনে। খানপুর চুইঝাল প্রজেক্ট ও নার্সারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সবুজ। চুইকথা চুইঝাল অর্থকরী ফসল। বেশি চাষ হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এটি লতাজাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর বর্ণের আর পাতা পানপাতার মতো। রং হয় সবুজ। এর কাণ্ড মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়ামুক্ত উঁচু জমিতে এটি চাষ করা হয়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ অথবা আশ্বিন-কার্তিক মাসে চুইয়ের কাণ্ড রোপণ করা হয়। চুই লতাজাতীয় গাছ বলে বাউনি (বাহক) হিসেবে আম, জাম, সুপারি, নারকেল ইত্যাদি গাছের গোড়ায় এটি রোপণ করা হয়। পাহাড়ি ও দেশিসহ বিভিন্ন জাতের চুইগাছ আছে। সবুজরা দেশি জাতের চুইয়ের আবাদ করেন। এক বছর বয়সী চুই খাওয়া যায়। তবে পাঁচ-ছয় বছরের চুই উত্তম। এক কেজি চুই পাঁচ থেকে আটশ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। সবুজের প্রতিবেশী অধ্যাপক আব্দুল হালিম বলেন, সবুজ বেকার যুবকদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক হাকিম হাফেজ আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, অত্যন্ত মুখরোচক, শ্লেষ্মা ও ব্যথানাশক এবং হজমকারক ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ লতাজাতীয় গাছ হলো চুই। মসলা হিসেবে মাংস ও মাছ রান্নায় এর জুড়ি নেই। মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার বলেন, চুইঝাল রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে চাষ করা যায়। চুইয়ের আবাদ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব। সবুজ চুইঝাল চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করছেন।

আরও পড়ুন: